'ধৈর্য্যের পরীক্ষা' দিয়ে শেষমেশ ইন্টারভিউ দিলেন ১৮৭ জন হার না মানা লড়াই শেষে ফুটল হাসি

'ধৈর্য্যের পরীক্ষা' দিয়ে শেষমেশ ইন্টারভিউ দিলেন ১৮৭ জন হার না মানা লড়াই শেষে ফুটল হাসি

 ২০১৪ সালে টেট। তারপর থেকে শুধুই লড়াই আর লড়াই। দীর্ঘ আইনি লড়াই। টেট প্রশ্নপত্রে ছ'টি প্রশ্ন ভুল ছিল। হিসেব মতো ওই ভুল প্রশ্নগুলির জন্য সকলেরই ৬ নম্বর পাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তা হয়নি। অগত্যা শুরু হয় হক বুঝে নেওয়ার আইনি লড়াই। ২০১৮ সালে করা হয় মামলা।

শেষে ২০২২ সালে মিলল বিচার। কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অভিজিত্‍ গঙ্গোপাধ্যায়ের নির্দেশ দিয়েছেন চাকরি দিতে হবে। তিন দফায় মোট ১৮৭ জনের প্রাথমিকে চাকরির নির্দেশ দিয়েছিলেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। সেই মতো ইন্টারভিউয়ের ডাক পেয়েছিলেন দীর্ঘ দিন ধরে অপেক্ষায় থাকা চাকরিপ্রার্থীরা। সোমবার দুই দফায় ইন্টারভিউ হয় তাঁদের। এত লড়াই, সংগ্রামের পর ইন্টারভিউ দিতে পেরে খুশি সকলেই। বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়, যাঁর নির্দেশে মুখে হাসি ফুটেছে চাকরিপ্রার্থীদের, তাঁকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন ওঁরা।

২০১৪ সাল থেকে ২০২২ সাল। দীর্ঘ আট বছর। এই আট বছরে সকলেরই জীবন প্রায় কম-বেশি বদলে গিয়েছে। যিনি বীরভূম থেকে চাকরির জন্য আবেদন করেছিলেন, আজ তিনি বিবাহিতা। এখন আর তিনি বীরভূমের নন, কলকাতার বাসিন্দা। আবার কেউ আগে থাকতেন বাঁকুড়ায়, এখন বাড়ি মেদিনীপুরে। চিন্তা এখনও রয়েছে ওদের… কোথায় হবে চাকরি… আগের ঠিকানা অনুযায়ী চাকরি হলে তো, সে আর এক ঝক্কি! কিন্তু সে সব নিয়ে এখন আর ভাবতে চাইছেন না ওঁরা। এত লড়াই, সংগ্রামের পর শেষে চাকরিটা তো হল!

আচার্য ভবনের বাইরে আজ ওই চোখ-মুখগুলিতে যেন এক যুদ্ধ জয়ের তৃপ্তি। বাঁকুড়ার ছাতনা থেকে ইন্টারভিউ দিতে এসেছেন এক মা। তার সন্তানের বয়স পাঁচ মাস। সেই কোলের সন্তানকে নিয়েই আচার্য ভবনে এসেছেন ইন্টারভিউয়ের জন্য। আবার কেউ এসেছেন ভাঙা পা নিয়ে। ওয়াকারে ভর দিয়ে কোনওরকমে এসেছেন আচার্য ভবন পর্যন্ত। যন্ত্রণা, কষ্ট সব রয়েছে… কিন্তু তারপরও লড়াই জিতে নেওয়ার হাসিও রয়েছে আজ। যত কষ্টই হোক না কেন… আজ তাই ওঁরা সবাই এসেছেন আচার্য ভবনে। পুজোর আগেই তাঁদের ‘বঞ্চিত’ তকমা ঘুচতে চলেছে। হার না মানা লড়াইয়ে নিজেদের হক বুঝে নেওয়ার তৃপ্তি আজ ওদের সবার চোখে মুখে।

হাইকোর্টের বিচারপতি অভিজিত্‍ গঙ্গোপাধ্যায়ের নির্দেশ রয়েছে, ২৮ সেপ্টেম্বরের মধ্যে নিয়োগ দিতে হবে ওই ১৮৭ জন বঞ্চিত চাকরিপ্রার্থীকে। প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের এদিন সেই মতো ইন্টারভিউয়ের জন্য ডেকে পাঠিয়েছিল ওই চাকরিপ্রার্থীদের। অনেকগুলি বছর নষ্ট হয়ে গিয়েছে ওদের। কিন্তু তারপরও বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের নির্দেশে শেষ পর্যন্ত যে ওঁদের চাকরির ব্যবস্থা হচ্ছে, এতেই খুশি তাঁরা। এখন তাঁদের ইচ্ছা, যাতে দ্রুত নিয়োগ হয়ে যায়।