১৫ বছর পর স্ত্রী জানলেন যমজ সন্তানের বাবা তাঁর স্বামী নন, অন্য পুরুষ

১৫ বছর পর স্ত্রী জানলেন যমজ সন্তানের বাবা তাঁর স্বামী নন, অন্য পুরুষ

য়া দিল্লি: স্বাভাবিক উপায়ে সন্তান হচ্ছিল না। তাই কৃত্রিম পদ্ধতিতে সন্তান ধারণের পথে হেঁটেছিলেন নয়া দিল্লির এক দম্পতি। কৃত্রিম উপায়ে স্বামীর শুক্রাণু দিয়ে স্ত্রীর ডিম্বাণুর নিষেক ঘটানোর কথা ছিল। চিকিত্‍সার বছর দুই পর যমজ কন্যা সন্তানের জন্ম দিয়েছিলেন স্ত্রী।

এর প্রায় ১৫ বছর পর ওই দম্পতি জানতে পারলেন, তাদের যমজ সন্তানের বাবা অন্য এক পুরুষ। হাসপাতালে দুই পুরুষের শুক্রাণু অদল-বদল হয়ে গিয়েছিল। এই ঘটনার গুরুতর গাফিলতির প্রেক্ষিতে, ২ কোটি টাকার ক্ষতিপূরণ চেয়ে উপভোক্তা আদালতে একটি মামলা দায়ার করেছিলেন ওই দম্পতি। সেই আবেদনের ভিত্তিতে ওই হাসপাতালকে ১ কোটি ৩০ লক্ষ টাকা জরিমানা করল জাতীয় উপভোক্তা বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন বা এনসিডিআরসি (NCDRC)। দেশে ব্যাঙের ছাতার মতো বন্ধ্যাত্ব দূর করার প্রজনন ক্লিনিকগুলির সংখ্যা বৃদ্ধির বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন এনসিডিআরসি প্রিসাইডিং সদস্য ড. এসএম কান্তিকর।

এই ঘটনার সূত্রপাত হয়েছিল ২০০৮ সালে। কয়েক বছর ধরে চেষ্টার পরও সন্তান না হওয়ার পর, নয়াদিল্লির ভাটিয়া গ্লোবাল হসপিটাল অ্যান্ড এবং এন্ডোসার্জারি ইনস্টিটিউটের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন। ইন্ট্রা-সাইটোপ্লাজমিক স্পার্ম ইনজেকশন বা আইসিএসআই (ICSI) পদ্ধতিতে স্ত্রীর ডিম্বাণুর নিষেক ঘটানো হয়। ২০০৯ সালে যমজ কন্যা সন্তানের জন্ম দেন ওই মহিলা। তিনি জানতেন, তাঁর স্বামীই সন্তানদের ‘বায়োলজিক্যাল ফাদার’ বা জৈবিক অর্থে বাবা। তবে, এক সন্তানের রক্তের গ্রুপ পরীক্ষা করতে গিয়েই এই বিষয়ে প্রথম সন্দেহ হয়েছিল বাবা-মায়ের। এরপর, তাঁরা পিতৃত্ব পরীক্ষা করান। দেখা যায়, তাঁদের সন্তানের জৈবিক বাবা ওই ব্যক্তি নন, অন্য কেউ।

এরপরই উপভোক্তা আদালতের শরণাপন্ন হয়েছিলেন ওই দম্পতি। পরিষেবাদানে অবহেলা এবং গুরুতর গাফিলতির জন্য হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন তাঁরা। আবেদনে ওই দম্পতি বলেছিল, শুক্রাণু অদল-বদলের ফলে তাঁদের প্রচণ্ড মানসিক চাপের মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে তাঁদের মধ্যে দাম্পত্য কলহও হয়। সর্বোপরি তাঁদের সন্তানরা উত্তরাধিকারসূত্রে কোনও রোগে আক্রান্ত কি না, এই উদ্বেগ তৈরি হয়েছে তাঁদের মনে।

এই মামলার রায় দেওয়ার সময় কমিশন বলেছে, এই ক্ষেত্রে রোগীর অজান্তেই দাতাদের শুক্রাণুর অদল-বদল ঘটেছে। এই বিষয়ে দায়িত্বে থাকা চিকিত্‍সদের ত্রুটি ছিল না বলে জানিয়েছে কমিশন। তবে, হাসপাতালের পক্ষ থেকে এই গুরুতর ঘটনার দায় এড়ানোর অনেক চেষ্টা করা হয়েছে। চিকিত্‍সক, কর্মী, উচ্চপদস্থ অফিসাররা একে অপরের দিকে আঙুল তুলে দায় ঝেড়ে ফেলতে চেয়েছে। দেশে মাত্রাতিরিক্ত হারে এই ধরনের ক্লিনিকগুলি তৈরি হচ্ছে বলেই এই ধরনের ভুল হচ্ছে বলে জানিয়েছে এনসিডিআরসি। কমিশন জানিয়েছে, এই চিকিত্‍সার ফলে বেশ কিছু জটিল নৈতিক, সামাজিক এবং আইনি সমস্যা তৈরি হয়। অথচ, এই বিষয়ে কোনও প্রোটোকল নেই। গ্যামেট এবং ভ্রূণ দান, সারোগেসি এবং গর্ভকালীন বাহকের ব্যবহারের ক্ষেত্রে, সম্ভাব্য ক্ষতি এবং সামাজিক অসাম্য নিয়ন্ত্রণের জন্য বিধান ও আইন তৈরির প্রয়োজন। এই ধরনের ক্লিনিকগুলির আরও যাচাই-বাছাই করার উপরও জোর দিয়েছে এনসিডিআরসি। বন্ধ্যাত্বের চিকিত্‍সার পর, জন্ম নেওয়া শিশুদের ডিএনএ প্রোফাইলিং বাধ্যতামূলক করার প্রয়োজন রয়েছে বলেও জানিয়েছে কমিশন।

এনসিডিআরসি আরও বলেছে, বর্তমান মামলার প্রেক্ষিতে ভাটিয়া গ্লোবাল হসপিটাল অ্যান্ড এন্ডোসার্জারি ইনস্টিটিউটের চেয়ারপার্সন এবং ডিরেক্টরকে ১ কোটি টাকা দিতে হবে আবেদনকারী দম্পতিকে। সেই সঙ্গে বন্ধ্যাত্ব চিকিত্‍সার সঙ্গে যুক্ত দুই চিকিত্‍সকের প্রত্যেককে ১০ লক্ষ টাকা করে দিতে বলা হয়েছে। এছাড়া, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে এনসিডিআরসি-এর কনজিউমার লিগ্যাল এইড অ্যাকাউন্টে ২০ লক্ষ টাকা জমা দিতে হবে। সব মিলিয়ে ১ কোটি ৩০ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ পাচ্ছেন ওই দম্পতি। তবে, এই টাকা তাঁদের সন্তানদের নামে সমান ভাগ করে ফিক্সড ডিপোজিট বা স্থায়ী আমানত হিসেবে কোনও রাষ্ট্রীয় ব্যাঙ্কে রাখতে হবে। প্রাপ্ত বয়স্ক হওয়ার পর, ওই টাকা ব্যবহার করতে পারবে তারা। নমিনি হিসেবে থাকবেন বাবা-মা। শিশুদের কল্যাণের জন্য, প্রয়োজনে ওই টাকার সুদ ব্যাঙ্ক থেকে তুলতে পারবেন বাবা-মা।