পায়ুপথ বন্ধ 'গোপন' কোনও ভুলে? 'ট্যাবু' কাটিয়ে প্রথমেই ছুটে যেতে হবে হাসপাতালে

পায়ুপথ বন্ধ 'গোপন' কোনও ভুলে? 'ট্যাবু' কাটিয়ে প্রথমেই ছুটে যেতে হবে হাসপাতালে

পায়ুদ্বার দিয়ে ২৭ বছরের যুবকের শরীরে প্রবেশ করে আস্ত ডিওডোরেন্টের বোতল। শরীরে শুরু হয় অস্বস্তি। পেটের যন্ত্রণায় কষ্ট পেতে থাকে যুবক। জরুরি অবস্থায় বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে ভর্তি করা হয় ওই যুবককে। পরীক্ষা করার পর চোখ কপালে ওঠে চিকিত্‍সকদের। এক্স-রে রিপোর্টে দেখা যায়, যুবকের পেটে আটকে রয়েছে একটা আস্ত ডিওডোরেন্টের বোতল।

সংবাদের পাতায় প্রায় দিনই এই ধরনের ঘটনা ক্রমাগত উঠে আসছে। কেউ ভুলবশত কিংবা কেউ সজ্ঞানে কোনও এমন পদার্থ শরীরের ভিতর ঢুকিয়ে ফেলছেন যার জেরে তৈরি হচ্ছে প্রাণসংশয়। প্রথমত, এমন ঘটনা প্রাপ্তবয়স্ক বা কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে কেন দেখা যাচ্ছে, তা নিয়ে সচেতনতা জরুরি। আর যদি এমন ঘটনা থেকে ঘটে তাহলে দ্রুত চিকিত্‍সকের সঙ্গে যোগাযোগ পরামর্শ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।

এই প্রসঙ্গে TV9 বাংলার তরফে যোগাযোগ করা হয় চিকিত্‍সক তথা মেডিসিন-বিশেষজ্ঞ শুদ্ধসত্ত্ব চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে। তিনি বলেন, “এই ক্ষেত্রে সর্বপ্রথম সোশ্যাল ট্যাবুকে দূরে সরিয়ে রাখতে হবে। যদি এমন কোনও ঘটনা ঘটে তাহলে ভয় বা লজ্জা না পেয়ে দ্রুত চিকিত্‍সকের কাছে যাওয়া উচিত। ডাক্তারকে সব ঘটনা খুলে বলতে হবে। প্রাথমিকভাবে কোলনোস্কপি করে এই ধরনের পদার্থগুলো শরীর থেকে বের করা হয়। কোলনোস্কপির টিউবও সরু হয়। অন্ত্রের ভিতর আটকে থাকা পদার্থের আকার যদি কোলনোস্কপির টিউবের চেয়ে বড় হয় তখন সমস্যা হয়। সেই ক্ষেত্রে অস্ত্রপচার ছাড়া আর কোনও উপায় থাকে না। কোলনোস্কপির মাধ্যমে যদি আটকে থাকা পদার্থ শরীর থেকে বেরিয়ে যায় তাহলে ভাল। এছাড়া অস্ত্রপচারের প্রয়োজন হয়।”

অস্ত্রপচারের জেরেই প্রাণ বেঁচেছে ওই ২৭ বছরের যুবকের। কিন্তু আস্ত ডিওডোরেন্টের বোতল কীভাবে পৌঁছাল পেটের ভিতর? হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, রোগীর দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার পাথরপ্রতিমা বাসিন্দা। চিকিত্‍সকরা জানিয়েছে, অস্ত্রপচারের প্রায় ২০ দিন আগে ওই ডিওডোরেন্টের বোতল রোগীর পেটের ঢুকে যায়। বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের সুপারিনটেনডেন্ট তাপস ঘোষ সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া এক সাক্ষাত্‍কারে জানিয়েছেন, এটা তাঁদের জন্য চ্যালেঞ্জের ছিল।

প্রায় তিন সপ্তাহ ধরে ওই ডিওডোরেন্টের বোতল যুবকের পেটে আটকে ছিল। ডিওডোরেন্টের বোতলটি প্রায় ৮ ইঞ্চির ছিল। এত দিন ধরে পেটের ভিতর আস্ত ডিওডোরেন্টের বোতল আটকে থাকায় ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয় যুবকের খাদ্যনালী। এমনকী মলত্যাগ করতেও সমস্যা হচ্ছিল ওই যুবকের। চিকিত্‍সকরা জানান, পায়ুদ্বার দিয়ে ওই ডিওডোরেন্টের বোতলটি যুবকের পেটের মধ্যে যায়। এরপর থেকেই শুরু হয় শারীরিক অস্বস্তি।

শারীরিক অবনতি হতে শুরু করলে জরুরি বিভাগে ভর্তি করা হয় ওই যুবককে। এরপরই শুরু হয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা। এক্স-রে রিপোর্টে ধরা পড়ে ৮ ইঞ্চির ঢাকনা-সহ ডিওডোরেন্টের বোতল। দেরি না করে চিকিত্‍সকরা অস্ত্রপচারের ব্যবস্থা করে। প্রায় দু’ঘণ্টা ধরে অস্ত্রপচার করার পর ওই যুবকের প্রাণ বাঁচাতে সক্ষম হন বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের চিকিত্‍সকরা।