র‍্যাকেট ভেঙেছিলেন, ম্যাচ হেরে চিত্‍কার করেছিলেন, রাগে অগ্নিশর্মা হয়েছিলেন 'শান্ত' রজারও

র‍্যাকেট ভেঙেছিলেন, ম্যাচ হেরে চিত্‍কার করেছিলেন, রাগে অগ্নিশর্মা হয়েছিলেন 'শান্ত' রজারও

জার ফেডেরার মানে তো শান্ত, নম্র, ভদ্র একজন মানুষ। যিনি জয়, হার সব কিছুই নেন হাসি মুখে। এই ছবিই তো দেখে অভ্যস্ত টেনিস দুনিয়া। কিন্তু ২০ বছর আগের ফেডেরারকে মনে পড়ে?

সে এক অন্য জন্মের কথা। ফেডেরার তখন র‍্যাকেট ভাঙতেন, চিত্‍কার করতেন, কেঁদে ফেলতেন। তরুণ ফেডেরার টেনিস কোর্টে অগ্নিশর্মা হয়ে থাকতেন।

নিজের আবেগের উপর কোনও নিয়ন্ত্রণ ছিল না ফেডেরারের। র‍্যাকেট ছুড়ে ফেলে শাস্তিও পেয়েছিলেন। তাঁকে দিয়ে শৌচাগার পরিষ্কার করানো হয়েছিল। অফিস পরিষ্কার করতে হয়েছিল।

ফেডেরারের রাগে অতিষ্ঠ ছিলেন তাঁর বাবা, মাও। এখন যাঁরা গর্ব করেন ২০টি গ্র্যান্ড স্ল্যামের মালিককে নিয়ে। সেই বাবা, মা লজ্জা পেতেন ছেলের এমন কাজকর্মে।

যে শান্ত ফেডেরারকে এখন দেখা যায়, একটা সময় এমন ছিলেন না তিনি। এখনকার নিক কিরিয়সের সঙ্গে তুলনা করা যেতে পারে তরুণ ফেডেরারের। কখনও কখনও কিরিয়সকেও ছাপিয়ে যেত ফেডেরারের রাগ। নিজের হার হজমই করতে পারতেন না ফেডেরার।

এক বার ম্যাচ হেরে ফেডেরার ঘ্যান ঘ্যান করছিলেন। গাড়িতে বসে গজ গজ করছিলেন নিজের উপর। তাঁকে শান্ত করতে অদ্ভুত কাণ্ড করেছিলেন ফেডেরারের বাবা রবার্ট। গাড়ি থেকে বার করে বরফের মধ্যে ফেডেরারের মাথা ঢুকিয়ে দিয়েছিলেন তিনি।

ফেডেরারের উপর বিরক্ত হয়ে এক বার তাঁর হাতে পাঁচ সুইস ফ্র্যাঙ্ক দিয়ে বাড়ি ফিরে গিয়েছিলেন রবার্ট। ফেডেরার মনে করেছিলেন যে বাবা মজা করছে। বাড়ি থেকে এত দূরে তাঁকে নিশ্চয়ই ছেড়ে দেবেন না। কিন্তু সেটাই করেছিলেন রবার্ট।

এই ঘটনার ফেডেরার পাল্টাতে শুরু করেন। তাঁর স্ত্রী মিরকা ফেডেরারের জীবনে আসার পর আরও পরিবর্তন ঘটে। ধীরে ধীরে শান্ত হতে শুরু করেন ফেডেরার।

২০০৫ সালে নাসদাক-১০০ ওপেনে ১৮ বছরের তরুণ রাফায়েল নাদালের বিরুদ্ধে খেলার সময় ফেডেরারকে এক বার কোর্টের মধ্যে রাগে র‍্যাকেট ছুড়ে ফেলতে দেখা গিয়েছিল।

২০০৬ সালে ইটালিয়ান ওপেনে নাদালের বিরুদ্ধে আরও একটি ম্যাচে নিজের উপর নিয়ন্ত্রণ হারান সেই সময় সাতটি গ্র্যান্ড স্ল্যামের মালিক ফেডেরার। দর্শক আসন থেকে নাদালকে পরামর্শ দিচ্ছিলেন তাঁর কাকা টনি। রেগে গিয়ে ফেডেরার চিত্‍কার করে ওঠেন নাদালের কাকার উপর।

২০০৯ সালে নোভাক জোকোভিচের উপর রেগে যান ফেডেরার। ২০ বছরের তরুণ জোকোভিচের বিরুদ্ধে মিয়ামি মাস্টার্সে খেলতে নেমে প্রথম সেটে হেরে যান ফেডেরার। রাগে র‍্যাকেট ভেঙে ফেলেন। চেয়ার আম্পায়ারের বিরুদ্ধে চিত্‍কার করেন। ম্যাচ শেষে হাত পর্যন্ত মেলাননি তাঁর সঙ্গে।

২০০৯ সালে ইউএস ওপেন ফাইনালে হুয়ান মার্টিন দেল পোত্রোর বিরুদ্ধে খেলার সময় আম্পায়ারের উপর রেগে গিয়েছিলেন ফেডেরার। কটূক্তি করেছিলেন আম্পায়ারকে। এর জন্য ফেডেরারকে ১৫০০ ডলার (প্রায় এক লক্ষ ২২ হাজার টাকা) জরিমানা করা হয়েছিল।

তিন বছর পর ২০১২ সালে ফরাসি ওপেনে ফের মেজাজ হারান ফেডেরার। বিপক্ষে সেই দেল পোত্রো। লম্বা র‍্যালির মাঝে হঠাত্‍ তাঁর মারা বল নেটে লাগে। তাতেই নিজের উপর রেগে যান ফেডেরার।

২০১৮ সালে দেল পোত্রোর বিরুদ্ধে ইন্ডিয়ান ওয়েলস মাস্টার্সে খেলার সময় আম্পায়ারের উপর চটে যান ফেডেরার। রাগে মাটিতে র‍্যাকেট ছুড়ে মারেন।

তরুণ বয়সে যে রাগী ফেডেরারকে দেখা যেত তা সময়ের সঙ্গে শান্ত হয়ে গেলেও মাঝে মধ্যে বেরিয়ে আসত। আপাত শান্ত ফেডেরারও রেগে যেতেন, র‍্যাকেট ভাঙতেন, অগ্নিশর্মা শয়ে উঠতেন। এখন তিনি ঢুকে পড়লেন অবসরের গ্রহে।