আবির্ভাব দিবসে তারাপীঠে ভক্তদের ঢল, কেন মা আজ পশ্চিমমুখী?

আবির্ভাব দিবসে তারাপীঠে ভক্তদের ঢল, কেন মা আজ পশ্চিমমুখী?

রোনা আবহে বছর দুয়েক পু্ন্যার্থীদের আগমনে ভাটা পড়েছিল মা তারার আর্বিভাব দিবসে। করোনা অতিমারি কমতেই এবার ফের জনজোয়ারে ভাসল তারাপীঠ মন্দির। এবারও পুন্যার্থীদের জন্য সমস্ত গেট খুলে দেওয়া হয়েছিল। ফলে দু'বছর ধরে মন্দিরে না আস্তে পারা মানুষজন এবার বেশি ভিড় জমিয়েছিলেন। তবে স্থানীয়দেরই ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো।

কথিত আছে শারদীয়ার শুক্ল চর্তুদশীতেই বশিষ্ঠ মুনি সাধনার মাধ্যমে মা তারাকে স্বপ্নে দেখতে পান। সেই স্বপ্নে দেখা মূর্তি দীর্ঘকাল মাটির নিচে ছিল। পরে বনিক জয়দত্ত সওদাগর সেই মূর্তি তুলে মা'কে মূল মন্দিরে প্রতিষ্ঠা করেন। তাই এই দিনটিকেই মায়ের আর্বিভাব দিবস হিসাবে ধরে নেওয়া হয়েছে। প্রাচীন সেই রীতি মেনে আজও মা তারাকে মূল মন্দিরের বাইরে বিশ্রামখানায় এনে পুজো করা হয় সারাদিন। শনিবার ভোরে মা তারাকে মূল মন্দির থেকে বের করে বিরামখানায় পশ্চিমমুখী করে বসানো হয়।

কথিত আছে, তারা মায়ের বোন মৌলাক্ষাদেবী। ঝাড়খণ্ড রাজ্যের মলুটিতে অধিষ্ঠান করেন তিনি। এই শুক্ল চতুর্দশীতেই মুখোমুখি বসে কথা বলেন দুই বোন। যেহেতু মলুটি তারাপীঠের পশ্চিমে, সেই কারণে এই দিনটিতে তারা মাকে পশ্চিম দিকে মুখ করে বসানো হয়। এই পশ্চিম দিকেই শ্মশান। এই একটি দিনে মাকে ওই দিকে মুখ করে বসানো হয়ে থাকে।

মন্দির কমিটির সভাপতি তারাময় মুখোপাধ্যায় বলেন, 'প্রাচীন ঐতিহ্য মেনেই চর্তুদশীর দিন ভোরে প্রতিবছর মা তারাকে মূল মন্দির থেকে বের করে বিরামখানায় আনা হয়। সেখানেই মা'কে স্নান করিয়ে পুজার্চনা করা হয়। বছরের এই একটি দিন মায়ের কোন ভোগ হয় না। ফলে সেবাইতরাও উপবাসে থাকেন। এদিন দু'বার মা'কে স্নান করানো হয়। সারাদিন ধরে চলে পূজো পাঠ। রাত্রে মায়ের কাছে ফুল ও ফলের ডালি দিয়ে ভোগ নিবেদন করা হয়। তারপর সেবাইতরাও ফলাহার করেন।'

এইদিন পূণার্থীরা ভক্তি ভরে মা-কে স্পর্শ করে পুজো দিতে পারেন। তাই প্রতিবছর এই দিনটিতে পুন্যার্থীদের ভিড় জমে। দু'বছর করোনা অতিমারির কারণে পুন্যার্থীরা সেই সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়েছিলেন। তাই এবার পুন্যার্থীদের ঢল নেমেছে।

গত বছর অনেক ভক্তকে মোবাইলে মায়ের দর্শন করিয়েছিলেন সেবাইতরা। কিন্তু এবার সশরীরে উপস্থিত হয়ে মায়ের দর্শন পেয়ে খুশি কলকাতারা পূর্ণিমা মণ্ডল। তিনি বলেন, 'প্রতিবছর এই দিনটিতে মায়ের কাছে আসি। কিন্তু দু'বছর ধরে করোনা অতিমারি আমাদের পায়ে শিকল পড়িয়ে দিয়েছিল। এবার সেই শিকল ছিঁড়ে মন্দিরে উপস্থিত হয়ে মায়ের দর্শন করতে পেরে ভালো লাগছে।'