দূর্গাপুজোর অনুদান বেড়ে হয়েছে ৬০ হাজার, পাঁচ বছরে রাজ্য সরকারের অনুদান বৃদ্ধি কতটা ?

দূর্গাপুজোর অনুদান বেড়ে হয়েছে ৬০ হাজার, পাঁচ বছরে রাজ্য সরকারের অনুদান বৃদ্ধি কতটা ?

দুর্গাপূজা উপলক্ষে বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাজ্যের ৪৩ হাজার দুর্গাপুজো কমিটিগুলিকে ৬০ হাজার টাকা অনুদানের ঘোষণা করেছিলেন। মুখ্যমন্ত্রীর এই ঘোষণার পর থেকেই রাজ্যজুড়ে সমালোচনা শুরু করে বিরোধীরা। বাকি থাকা ডিএ নিয়ে রাজ্যে ক্রমাগত চলতে থাকে চাপানউতোর।

দুর্গাপুজো উপলক্ষে ক্লাবগুলোকে যখনই আগের বারের থেকে ১০ হাজার টাকা অনুদান বাড়ানোর কথা ঘোষণা করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, তখন সকলের মনে বিভিন্ন প্রশ্ন জাগতে শুরু করেছিল। এরই মধ্যে কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশ সত্ত্বেও রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের মেলেনি বকেয়া ডিএ বা মহার্ঘভাতা। বরং করা হয়েছে পাল্টা মামলা। এই পরিস্থিতিতে পুজো কমিটিগুলিকে ৬০ হাজার টাকা করে অনুদান দেওয়ার কথা ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কেন এই বাড়তি অনুদান?‌ এই প্রশ্ন তুলে ২৪ অগাস্ট আদালতে এই সংক্রান্ত মামলা করেছিল আইনজীবীদের এক সংগঠন। তাতে আদালতে রাজ্য সরকার হলফনামা দিয়ে জানালো সরকারি কর্মীদের ডিএ বা মহার্ঘ্য ভাতা দেওয়া নাকি বাকি নেই। রাজ্য সরকারের এই হলফনামা প্রকাশ্যে আসার পরই হইচই সব মহলে।

রাজ্যের স্বরাষ্ট্র দপ্তর সূত্রে খবর, ২০১৮ থেকে ২০২১ সাল এই চার বছরে পুজো কমিটিগুলোকে অনুদান হিসেবে মোট ৪৮৪ কোটি ২৩ লক্ষ ২৬ হাজার টাকা দিয়েছে সরকার। ২০১৮ সালে মোট ২৮ হাজার ক্লাবকে। ১০ হাজার টাকা করে অনুদান দেওয়া হয়েছিল। ২০১৯ সালে দেওয়া হয় ২৫ হাজার টাকা করে। ২০২০ সালে অনুদানের পরিমাণ বেড়ে দাঁড়ায় ৫০ হাজার টাকা। ২০২১ সালেও দেওয়া হয় ৫০ হাজার টাকা করে। ২০২২ সালে দেওয়া হচ্ছে ৬০ হাজার টাকা করে।

এবার আসি একটু বড় অঙ্কের দিকে। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম থেকে প্রাপ্ত তথ্য বলছে, অনুদানের পরিমাণ বাড়ার সাথে সাথে প্রতি বছর অনুদানপ্রাপ্ত পুজো কমিটির সংখ্যাও বেড়েছে। প্রথম বছর যেখানে ২৮ হাজার ক্লাবকে অনুদান দেওয়া হয়েছিল। এই বছর সে সংখ্যাটা বাড়তে বাড়তে ৪২ হাজারে পৌঁছেছে। ২০১৮ সালে অনুদানের জন্য রাজ্য সরকারের খরচ হয়েছিল ২৮ কোটি টাকা২০১৯ সালে ৬১ কোটি ১৩ লক্ষ ১১ হাজার টাকা। ২০২০ সালে ১৯৬ কোটি ৫৭ লক্ষ ২৫ হাজার টাকা। ২০২১ সালে ২০৪ কোটি টাকা। ২০২২ সালে দেওয়া হচ্ছে ২৫২ কোটি টাকা

অর্থাত্‍ হিসেব বলছে শেষ পাঁচ বছর মিলিয়ে রাজ্য সরকার অনুদানের জন্য মোট ৭৪২ কোটিরও বেশি টাকা খরচ করেছে। এবার আসা যাক ডিএ বা মহার্ঘ্য ভাতার হিসেবে। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, কনফেডারেশন অফ স্টেট গভর্নমেন্টস এমপ্লয়িজের দাবি, ২০০৯ সালের ১ জুলাই থেকে ২০১৬ সালের ১ জুলাই পর্যন্ত নিয়ম মোতাবেক। ডিএ পাননি রাজ্য সরকারি কর্মচারীর। সেই বকেয়া ডিএ যাতে রাজ্য সরকার মিটিয়ে দেয়। সেই নির্দেশ দিয়েছিল কলকাতা হাইকোর্ট। কনফেডারেশন অফ স্টেট গভর্নমেন্টস এমপ্লয়িজের হিসাব অনুযায়ী গ্রুপ 'ডি' কর্মীরা (বেতনক্রম ৬,৬০০ টাকা হলে)। বকেয়া ডিএ বাবদ ২৭৮,০০০ টাকা পাবেন। গ্রুপ 'সি' কর্মীরা (বেতনক্রম ৮,৮০০ টাকা) ৩৭৩,০০০ টাকা পেতে পারেন।

এদিকে সংবাদমাধ্যমের সূত্র বলছে, রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের ডিএ মেটাতে প্রায় ২৩,০০০ কোটি টাকা লাগবে। এবং সবথেকে বড় কথা এই ডিএ এখনও মেটানো হয়নি। বিরোধীরা প্রশ্ন তুলছে তাহলে কোন তথ্যের ওপর ভিত্তি করে রাজ্য সরকার আদালতকে হলফনামায় জানালো যে ডিএ বকেয়া নেই। পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর কটাক্ষ, পশ্চিমবঙ্গ ডিএ নামক শব্দ তুলে দিয়েছে। এদিকে আদালতে ওঠা এই মামলায় রাজ্য সরকারের দাবি, ডিএ বা মহার্ঘ ভাতা এবং পূজার অনুদান- দুটো সম্পূর্ণ আলাদা বিষয়। দুটো বিষয়কে এক জায়গায় নিয়ে এসে মামলা করা যায় না। এবার দেখার এই মামলায় কি রায় দেয় কলকাতা হাইকোর্ট?