৩৭ হাজার ভুয়ো সংস্থার GST Registration বাতিল

৩৭ হাজার ভুয়ো সংস্থার GST Registration বাতিল

 নরেন্দ্র মোদির(Narendra Modi) সরকার যা করে দেখাতে পারেনি, সেটাই করে দেখাল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের(Mamata Banerjee) সরকার। বাংলায়(Bengal) থাকা ৩৭ হাজার ভুয়ো সংস্থার GST Registration বাতিল করে দিল মমতার সরকার। বিগত ১৬ মাসে এই পদক্ষেপ করা হয়েছে।

মোদি সরকার দেশে তড়িঘড়ি করে GST লাগু করে দিয়েছে। ২০১৭ সালের ১ জুলাই থেকে দেশে এই নয়া কর ব্যবস্থা লাগু করেছে মোদি সরকার। সেই হিসাবে চলতি বছরের জুলাই মাসেই ৬ বছর পূর্ণ হয়ে যাবে GST লাগু হওয়ার সময়। কিন্তু দেখা যাচ্ছে এখনও এই কর ব্যবস্থার পরিকাঠামোয় প্রচুর ফাঁক রয়ে গিয়েছে। আর এই সব ফাঁক গলেই দেশে বাড়ছে প্রতারণার কারবার ও অসাধু ব্যবসায়ীদের কারবার। GST আদায়ের সঙ্গে সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে প্রতারণার পরিমাণ। কেন্দ্রেরই তথ্য অনুযায়ী ২০২০-২১ এবং ২০২১-২২ অর্থবর্ষে এই সংক্রান্ত জালিয়াতির পরিমাণ ছিল ৫৫ হাজার কোটি টাকারও বেশি। গত আর্থিক বছরে সেই অঙ্কটাই ১ লক্ষ কোটি টাকায় পৌঁছেছে।

বাংলার বুকে GST নিয়ে যে প্রতারণা চলছে আর তার জন্য যে রাজ্য সরকারের আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে তা বহুবার রাজ্যের তরফে কেন্দ্রকে জানানো হয়েছে। কিন্তু দেখা যাচ্ছে এই GST জালিয়াতি রুখতে বাংলার জন্য কোনও পদক্ষেপ করতেই রাজি নয় মোদি সরকার ও কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রক। তাই শেষে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে এই জালিয়াতি ঠেকাতে কোমর বেঁধে নেমেছে রাজ্যের অর্থদফতর। নবান্ন সূত্রে জানা গিয়েছে, গত আর্থিক বছরে লাগাতার অভিযান চালিয়ে প্রায় সাড়ে ৩২ হাজার ভুয়ো করদাতা ধরা পড়েছে। তাদের GST Registration বাতিল করা হয়েছে। চলতি আর্থিক বছরের প্রথম দু'মাসেও নতুন করে বাতিল হয়েছে প্রায় সাড়ে ৪ হাজার GST Registration। সব মিলিয়ে বিগত ১৬ মাসে বাংলায় বাতিল হয়েছে ৩৭ হাজার ভয়ো সংস্থা বা আয়কর দাতার GST Registration।

বাংলায় GST Registration রয়েছে প্রায় ৬ লক্ষ সংস্থার। তাদের সবাই যে নিয়মিত কর মেটায় বা Return দাখিল করে, এমনটা নয়। তাই যে সংস্থাগুলির GST সংক্রান্ত হিসেবে গোলমালের আভাস রয়েছে, নজর রাখা হয় তাদের ওপর। পাশাপাশি খোঁজ নেওয়া হয়, কোন কোম্পানি শুধুমাত্র খাতায় কলমে GST Registration করে রেখেছে। GST-তে সবচেয়ে পরিচিত প্রতারণা হল, Input Tax Credit বা ITC সংক্রান্ত জালিয়াতি। Fake Invoice বা চালান তৈরি করে ITC আদায় পুরনো রেওয়াজ। যে ফাঁকফোকরের সুযোগ নিয়ে এই কাজ করা হয়, সেগুলিকেই এখন রোখার চেষ্টা করছে রাজ্যের অর্থদফতর। এর জেরে রাজ্যে বেশ কয়েক হাজার কোটি টাকার GST জালিয়াতি আটকানো গিয়েছে বলে দাবি করেছেন রাজ্যের অর্থদফতরের কর্তারা।

GST Registration'র সময় প্রতিষ্ঠানের ঠিকানা উল্লেখ বাধ্যতামূলক। এব্যাপারে সামান্যতম সন্দেহ হলে সেখানে পৌঁছে যাচ্ছেন রাজ্যের অর্থদফতরের কর্তারা। যেখানে ভুয়ো সংস্থা খুলে, নিরীহ ব্যক্তিদের নাম ভাঁড়িয়ে ডিরেক্টর পদে বসানো হয়েছে এবং Fake Invoice তৈরি হয়েছে, সেখানেই ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। ভুয়ো ঠিকানায় GST Registration হয়েছে-এইটুকু অভিযোগ পেলেও ব্যবস্থা নিচ্ছেন আধিকারিকরা। দেশের গড় GST আদায়ের নিরিখে এগিয়ে থাকার নেপথ্যে প্রতারণার চক্র ফাঁস করাকেই এখন গুরুত্ব দিচ্ছেন রাজ্যের অর্থ দফতরের কর্তারা। তাঁদের বক্তব্য, তাঁরা গত তিন বছর দেশের গড় GST আদায়ের হারের তুলনায় এগিয়ে আছেন। ২০২২-২৩ অর্থবর্ষে GST আদায় বৃদ্ধির হার ছিল ২১ শতাংশ। তার আগের বছরে ২৩ শতাংশ। চলতি অর্থবর্ষের প্রথম দু'মাসে বৃদ্ধির হার ১৯ শতাংশে পৌঁছেছে। প্রতারণা রুখতে না পারলে এই সাফল্য সম্ভব হতো না।