লকারে রাখছেন ভরি ভরি সোনা ? নিরাপদ থাকবে তো ? জেনে নিন সমস্ত খুঁটিনাটি

লকারে রাখছেন ভরি ভরি সোনা ? নিরাপদ থাকবে তো ? জেনে নিন সমস্ত খুঁটিনাটি

একজন বিবাহিত মহিলার কাছে কত সোনার গয়না থাকতে পারে? এর কি কোনও সীমা আছে? এই নিয়ে একাধিক গুজব ছড়িয়ে পড়ে। শুরু হয় জল্পনা। অবশেষে সমস্ত জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটাল সরকার। জানানো হয়েছে, উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত-সহ সোনার গয়না রাখার কোনও সীমা নেই।

তবে হ্যাঁ, তা আয়ের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ হতে হবে। এই প্রসঙ্গে একটি বিবৃতি জারি করেছে অর্থ মন্ত্রক। সেখানে বলা হয়েছে, 'সোনার গয়না বা অলঙ্কার রাখার কোনও সীমা নেই। একজন ব্যক্তি উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত কিংবা নিজের খরচে তৈরি করে যত খুশি সোনার গয়না রাখতে পারেন। তবে তা আয়ের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ হতে হবে'।

সম্প্রতি গোল্ড হোল্ডিংয়ের উপর কড়া নজর রাখছে সরকার। এমনকী তা বাজেয়াপ্তও করা হতে পারে। এমনই গুজব ছড়িয়ে পড়ে বাজারে। তবে অর্থ মন্ত্রকের তরফে বিবৃতিতে স্পষ্ট জানানো হয়েছে, উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত বা কৃষি থেকে আয়ের মাধ্যমে অর্জিত সোনার উপর নতুন কর আইন সংশোধনী বিলে ৮৫ শতাংশ পর্যন্ত কর লাগু হবে না'। কিন্তু এই বিবৃতিতে কত সোনা নিজের কাছে রাখা যেতে পারে সেই সম্পর্কে স্পষ্ট করে কিছু বলা হয়নি। ফলে ধোঁয়াশা অব্যাহত থাকে, সঙ্গে আশঙ্কাও। এটা বুঝেই কয়েক ঘণ্টার মধ্যে ফের একটা বিবৃতি জারি করে অর্থমন্ত্রক। সেখানে বলা হয়, 'আয়ের ব্যাখ্যাকৃত উত্‍স থেকে সোনা রাখার কোনও সীমা নেই'।

প্রথম বিবৃতিতে বলা হয়, উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া সোনা, গয়না এবং সেই সব স্বর্ণ সামগ্রী যা কৃষি থেকে আয়ের মাধ্যমে কেনা হয়েছে তার উপর নতুন কর আইন সংশোধনী লাগু হবে না। দ্বিতীয় বিবৃতিতে যোগ করা হয়, 'বিবাহিত মহিলারা ৫০০ গ্রাম, অবিবাহিত মহিলারা ২৫০ গ্রাম এবং পুরুষরা ১০০ গ্রাম পর্যন্ত সোনার গয়না এবং অলঙ্কার রাখতে পারেন, তা বাজেয়াপ্ত করা হবে না। সঙ্গে এই বলা হয়, যে কোনও সীমা পর্যন্ত গয়নার বৈধ হোল্ডিং সম্পূর্ণভাবে সুরক্ষিত। সরকারের দাবি অনুযায়ী, পারিবারিক রীতিনীতি এবং ঐতিহ্যের সঙ্গে যুক্ত সোনার গয়না বাজেয়াপ্ত না করার মতো বিচক্ষণতা অনুসন্ধানকারী অফিসারদের রয়েছে।

সোনার গয়নাকে সংশোধিত আইনের আওতায় আনা হবে, এমন গুজব উড়িয়ে দিয়ে সেন্ট্রাল বোর্ড অফ ডায়রেক্ট ট্যাক্সেস আগের দিন একটি বিবৃতি জারি করে বলেছিল, সোনার গয়নার উপর কর চাপানো হবে এমন কোনও আইন সরকার চালু করেনি। এই প্রসঙ্গে সিবিডিটি বলেছে, 'বৈধ আয়ের মাধ্যমে কেনা গয়না বা সোনা কিংবা ছাড়প্রাপ্ত আয়ের বাইরে যেমন কৃষি আয়ের বা যুক্তিসঙ্গত পারিবারিক সঞ্চয় থেকে কেনা বা আইনত উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত যা ব্যাখ্যাকৃত উত্‍স থেকে অর্জিত হয়েছে, এমন সোনা বা সোনার গয়নার উপর বিদ্যমান আইনের অধীনে বা প্রস্তাবিত সংশোধিত আইনের আওতায় কর ধার্য করা হবে না'।

কর আইন (দ্বিতীয় সংশোধন) বিল বর্তমানে রাজ্যসভয় বিবেচনাধীন। কালো টাকা উদ্ধার হলে সেই ব্যক্তির থেকে ৬০ শতাংশ কর এবং তার উপর ২৫ শতাংশ সারচার্জ (সব মিলিয়ে মোট ৭৫ শতাংশ) নেওয়ার জন্য আয়কর আইনের ১১৫ বিবিই ধারা সংশোধন করার চিন্তাভাবনা চলছে। শুধু তাই নয়, আরেকটি বিভাগে অঘোষিত সম্পদ, আয় বহির্ভূত সম্পদ কিংবা কালো টাকার উপর আরও ১০ শতাংশ জরিমানার আইনও রয়েছে। সব মিলিয়ে করের পরিমাণ ৮৫ শতাংশে নিয়ে যাওয়ার ভাবনা রয়েছে।

সিবিডিটি জানিয়েছে, '১১৫বিবিই-এর অধীনে অব্যক্ত আয়ের উপর করের হার বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। কারণ বেশ কিছু রিপোর্টে দেখা গিয়েছে, যাঁরা আয়কর ফাঁকি দেন তাঁরা অপ্রকাশিত আয়কে ব্যবসায়িক আয় বা অন্যান্য উত্‍স থেকে আয় হিসাবে আয়ের রিটার্নে অন্তর্ভুক্ত করার চেষ্টা করছেন'। সঙ্গে সিবিডিটি যোগ করেন, 'ধারা ১১৫ বিবিই-এর বিধানগুলি প্রধানত সেই ক্ষেত্রে প্রযোজ্য যেখানে সম্পদ বা নগদ ইত্যাদিকে 'অব্যক্ত নগদ বা সম্পদ' হিসাবে ঘোষণা করতে চাওয়া হয় বা যেখানে এটি অপ্রমাণিত ব্যবসায়িক আয় হিসেবে লুকনোর চেষ্টা হয়'।

এই বিলে অনুসন্ধান এবং বাজেয়াপ্ত করার ক্ষেত্রে আইটি আইনের অধীনে জরিমানা ৩ গুণ বাড়িয়ে ৩০ শতাংশ করার প্রস্তাব করেছে, যা বর্তমানে কালো টাকা ধারকদের আটকানোর লক্ষ্যে একটি পদক্ষেপ। সংশোধনীগুলি সংসদ অনুমোদন করে দিলে হিসেবহীন আয়ের উপর ৩০ শতাংশ জরিমানা হবে। ধারা ২৭১ এএবি সংশোধনের প্রস্তাব করার সময়, সরকার 'অন্য যে কোনও ক্ষেত্রে' আয়ের ৬০ শতাংশ জরিমানা ধার্য করার বিধান বজায় রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।