স্তনদুগ্ধে মিলল মাইক্রোপ্লাস্টিক! ভয়ঙ্কর তথ্য উঠে এল ইতালির বিজ্ঞানীদের গবেষণায়

স্তনদুগ্ধে মিলল মাইক্রোপ্লাস্টিক! ভয়ঙ্কর তথ্য উঠে এল ইতালির বিজ্ঞানীদের গবেষণায়

পৃথিবীর ইতিহাসে প্রথমবারের জন্য মানুষের স্তনদুগ্ধে (breast milk) মিলল মাইক্রোপ্লাস্টিকের (microplastic) নমুনা। ইতালির (Italy) একদল বিজ্ঞানীর (scientists) গবেষণায় উঠে এসেছে এই চাঞ্চল্যকর তথ্য।

সম্প্রতি ইতালিতে সন্তান জন্ম দেওয়ার এক সপ্তাহ পর ৩৪ জন সুস্থ সবল মহিলার স্তনদুগ্ধের নমুনা নিয়ে একটি পরীক্ষা করা হয়েছিল।

মোট নমুনার তিন-চতুর্থাংশের মধ্যে মিলেছে মাইক্রোপ্লাস্টিক। এরপরেই সদ্যোজাত শিশুদের স্বাস্থ্যের ব্যাপারে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞরা। তাঁরা জানিয়েছেন, রাসায়নিক দূষণকারী পদার্থের ক্ষেত্রে বিশেষভাবে অসহায় শিশুরা। সদ্যোজাত শিশুদের পক্ষে গুলি ভয়ঙ্কর ক্ষতিকর। যদিও, একই সঙ্গে বিজ্ঞানীরা এ কথাও জানিয়েছেন, মাইক্রোপ্লাস্টিক জনিত দূষকের উপস্থিতি সত্ত্বেও স্তন্যপান করানো শিশুদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ শিশুদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশের ক্ষেত্রে মাতৃদুগ্ধের কোনও তুলনাই হয় না।

যে কোনও রকমের প্লাস্টিকের ভগ্নাংশ, যা লম্বায় ৫ মিলিমিটারের চেয়ে ছোট, তাকেই বলা হয় মাইক্রোপ্লাস্টিক। এর আগে মানুষের কোষে, গবেষণাগারের জীবজন্তুদের মধ্যে, এবং সামুদ্রিক প্রাণীদের শরীরে মাইক্রোপ্লাস্টিক এর উপস্থিতি লক্ষ্য করা গিয়েছিল। কিন্তু জীবিত মানুষের উপর এই দূষকের ভূমিকা এখনও পর্যন্ত অজানাই ছিল। কিন্তু সম্প্রতি স্তনদুগ্ধে মাইক্রোপ্লাস্টিক এর উপস্থিতি খুঁজে পাওয়ার পর তার ক্ষতিকর প্রভাবের বিষয়টি তুলে ধরেছেন বিজ্ঞানীরা।

গবেষণার স্বার্থে ওই ৩৪ জন মায়ের খাদ্যাভ্যাস, বিশেষত প্লাস্টিকের মোড়ক বা কৌটোয় রাখা খাদ্য এবং পানীয় তাঁরা গ্রহণ করেছেন কিনা, সামুদ্রিক খাবার খেয়েছেন কিনা, তা নথিবদ্ধ করেন বিজ্ঞানীরা। এমনকি, তাঁদের ব্যাক্তিগত স্বাস্থ্যবিধিটে প্লাস্টিকের উপস্থিতিও খতিয়ে দেখেন তাঁরা। কিন্তু কোথাওই মাইক্রোপ্লাস্টিকের উপস্থিতির সঙ্গে কোনও সংযোগ খুঁজে পাননি তাঁরা। ফলে তাঁরা জানান, এর অর্থ হল, পরিবেশে উপস্থিত মাইক্রোপ্লাস্টিকই সরাসরি প্রবেশ করছে মানবশরীরে।

এর আগে ২০২০ সালে বিজ্ঞানীদের এই দলটি গর্ভবতী মায়েদের অমরাতে (নাড়ি) মাইক্রোপ্লাস্টিকের উপস্থিতি খুঁজে পেয়েছিলেন। অন্য আরও বেশ কয়েকটি সমীক্ষায় দেখা গেছে, স্তন্যপানের বদলে বোতলে করে দুধ খাওয়ানো হয় যে সব শিশুদের, তাদের শরীরে মাইক্রোপ্লাস্টিকের উপস্থিতির সম্ভাবনা বহুগুণ বেশি। আরও জানা গেছে, গরুর দুধেও প্লাস্টিকের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ভগ্নাংশ থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।

ইতালির ওই বিজ্ঞানী দল তাঁদের গবেষণাপত্রে জানিয়েছেন, পিভিসি, পলিইথিন এবং পলিপ্রপাইলিন দিয়ে তৈরি এই মাইক্রোপ্লাস্টিক। শিশুর শরীরে মাইক্রোপ্লাস্টিক দূষণ রুখতে তাঁরা গর্ভবতী মহিলাদের প্লাস্টিকজাত দ্রব্যে রাখা খাদ্য ও পানীয় গ্রহণের বিষয়ে বিশেষভাবে সতর্ক থাকার কথা বলেছেন। শুধু খাবারই নয়, প্রসাধন সামগ্রী, মাজন, এমনকি, সিন্থেটিক কাপড়ের তৈরি পোশাক পরার ব্যাপারেও বিশেষভাবে সাবধান হতে অনুরোধ করেছেন।