আজীবন মোহনবাগানিই থাকব ইস্টবেঙ্গল ছেড়ে 'বিষাক্ত' লাল-হলুদ সমর্থকদের ধুয়ে দিলেন সপ্তক

আজীবন মোহনবাগানিই থাকব ইস্টবেঙ্গল ছেড়ে 'বিষাক্ত' লাল-হলুদ সমর্থকদের ধুয়ে দিলেন সপ্তক

প্তক ঘোষকে নিয়ে বিতর্কে ইনভেস্টর ইমামি তো বটেই ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হচ্ছিল মেরাকি স্পোর্টসের। শেষমেশ পদত্যাগ করার পথেই হাঁটলেন সপ্তক।

তাঁকে নিয়ে বিতর্কের শেষ ছিল না। দায়িত্ব পাওয়ার পরই সঙ্গী করে ফেলেছিলেন বিতর্ককে। তবে শেষমেশ ইস্টবেঙ্গলের মিডিয়া ম্যানেজারের দায়িত্ব থেকে সরেই দাঁড়ালেন সপ্তক ঘোষ।

ইমামি ইস্টবেঙ্গলের তরফে সরকারিভাবে সপ্তককে মিডিয়া ম্যানেজারের হিসাবে নিয়োগের ঘোষণা করা হয়নি। সরকারি ঘোষণার আগেই সপ্তক নিজেই সোশ্যাল মিডিয়ায় ইস্টবেঙ্গলে নতুন দায়িত্ব পাওয়ার কথা ঘোষণা করেছিলেন। তারপরেই ইস্টবেঙ্গল সমর্থকদের একাংশের ক্ষোভের মুখে পড়তে হয় সংবাদসংস্থা পিটিআই-য়ে কিছু মাস সাংবাদিক হিসাবে কাজ করা সপ্তককে। প্রবল মোহনবাগানি সমর্থক। সেই সমর্থন থেকেই অতীতে বেশ কিছু ইস্টবেঙ্গল-বিদ্বেষী টুইট করেছিলেন। পুরোনো সেই টুইট ঘেঁটেই সপ্তকের অপসারণের দাবিতে সরব হয়েছিল ইস্টবেঙ্গল সমর্থককুল।

সোশ্যাল মিডিয়ায় ভয়ংকর ব্যারাকিংয়ের মুখে পড়ে সপ্তক অভিযোগ করে বসেন, তাঁর বাবা-মা'কে নাকি অশ্রাব্য গালিগালাজ করছেন লাল-হলুদ সমর্থকরা। এতে যেন আগুনে ঘি পড়ে। পাল্টা নতুন করে ইস্টবেঙ্গল সমর্থকদের তরফে দাবি করা হয়, ভিকটিম কার্ড প্লে করছেন সপ্তক।

এমন বিতর্কের আবহে যথেষ্ট বিরক্ত ছিল ইস্টবেঙ্গলের বিনিয়োগকারী ইমামি কর্তৃপক্ষ। আসলে এই নিয়োগের পিছনে ইমামির কোনও হাত-ই নেই। ক্লাবের ম্যানেজমেন্টে উপযুক্ত ব্যক্তিদের পরিচালনার জন্য মেরাকি স্পোর্টস-কে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। আউটসোর্সিং করা এই সংস্থা তো বটেই ইনভেস্টর ইমামির ভাবমূর্তিও ক্ষুন্ন হচ্ছিল গোটা বিতর্কে।

প্ৰথমে রটে গিয়েছিল, বিতর্কের দিনেই পদত্যাগ করানো হয়েছে সপ্তককে। তবে পরে জানা যায়, বেশ কিছু শর্ত আরোপ করে তাঁকে সেই মিডিয়া ম্যানেজারের পদেই রেখে দেওয়া হয়েছে। এরপরে সপ্তক নিজের টুইটার একাউন্টও ডিএক্টিভেট করে দেন।

তবে এমন অবস্থায় সপ্তকের পক্ষে বেশিদিন টানা সম্ভব হল না। শনিবার রাতে সপ্তক সোশ্যাল মিডিয়ায় জানিয়ে দিলেন, তিনি সরে দাঁড়াচ্ছেন ইস্টবেঙ্গলের মিডিয়া ম্যানেজারের পোস্ট থেকে। আজীবন তিনি মোহনবাগানিই থাকবেন।

ইস্টবেঙ্গলের সঙ্গে সংস্রব ছিন্ন করার পরে সপ্তক ফের একবার সোশ্যাল মিডিয়ায় খুল্লামখুল্লা আক্রমণ শানিয়েছেন ইস্টবেঙ্গল সমর্থকদের। তিনি লিখেছেন, 'অবশেষে সর্বসমক্ষে সত্যি কথা বলার সময় হয়েছে। সমস্ত জল্পনারই ইতি ঘটার দরকার। ইস্টবেঙ্গলের মিডিয়া ম্যানেজার হওয়ার প্রস্তাব গ্রহণ করেছিলাম সম্প্রতি। দিল্লিতে নিরাপদ চাকরি ছেড়ে কলকাতায় ফিরে এসেছিলাম। মোহনবাগান ক্লাবের সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে এই চাকরি গ্রহণ করা বেশ কঠিন সিদ্ধান্ত ছিল। ঘটনা হল, মোহনবাগানকে শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত সমর্থন চালিয়ে যাব।'

'এমন অনন্য প্রস্তাব পেয়ে বেশ উত্তেজিত ছিলাম। আমার বরাবরের বিশ্বাস ছিল চরম পেশাদারিত্ব ব্যক্তিগত সত্তা এবং আবেগকে নিয়ন্ত্রণে রাখে। তবে প্রথম দিন থেকেই সমস্যার সূত্রপাত ঘটল। তথাকথিত সমর্থকদের কাছ থেকে সোশ্যাল মিডিয়ায় চরম আক্রমণের মুখে পড়লাম। এমন সমস্ত শব্দ শুনলাম বা ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব নয়। আমার পরিবারের সদস্যরা তো বটেই বাবাকে নিয়েও এমন কথা বলা হল যে টুইটার একাউন্টই চিরতরে মুছে ফেলতে বাধ্য হলাম। আমার অসুস্থ মাকেও ছাড় দেয়নি এই বিষাক্ত সমর্থককুল। এমন কিছু মন্তব্য, বিবৃতি সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে দেওয়া হল যা অতীতের করা। আমি তখন স্কুলে যাওয়া নিতান্তই বালক।'

'স্থানীয় মিডিয়ায় আমাকে ভয়ঙ্করভাবে খোঁজা হচ্ছিল। বারবার আমাকে মিসকোট করা হচ্ছিল। এমন বিষয় বলা হচ্ছিল, যা আদৌ কখনও বলিনি। আর এই সবকিছু আমাকে সোশ্যাল মিডিয়া সেনসেশন বানিয়ে দিয়েছিল দু-দিনের জন্য। যেটা আমি কখনই চাইনি।'

'এখনও বিশ্বাস করি, ইস্টবেঙ্গলের যোগ দেওয়ার জন্য যথেষ্ট বিচক্ষণ ছিলাম। একজন উচ্চাকাঙ্খী ব্যক্তি এবং চরম পেশাদার হিসেবে ক্লাবকে সেবা করতে প্রস্তুত ছিলাম। আমি জানাতে চাই আমি কোনওভাবেই ক্লাবের সঙ্গে আর যুক্ত নই। তবে গত ৭২ ঘন্টায় যা ঘটল কারোর সঙ্গে ঘটা উচিত নয়। এমনকি আমার চরম শত্রুকেও যেন এরকম পরিস্থিতির মুখে পড়তে না হয়।'

'ফুটবল এমন একটা খেলা যা আমাদের সকলকে একত্রিত করে। চরম প্রতিদ্বন্দ্বীদেরও মিলিয়ে দেয়। সমস্ত সম্প্রদায়কে কাছাকাছি আনে। তবে সেই খেলাই এখন আমার শহরে এই পর্যায়ে নেমে এসেছে। এই কালো সময়ে যাঁরা আমার পাশে দাঁড়িয়েছেন, তাঁদেরকে ধন্যবাদ। আর যাঁরা এখনও আমাকে কালিমালিপ্ত করা, বাবা-মাকে গালিগালাজ করার চেষ্টা জারি রেখেছেন, তাঁদের জন্য আর কোনও লম্বা-চওড়া উপদেশ দিতে চাই না। তাঁদেরকে স্রেফ বলব, বড় হয়ে ওঠো। আমি এখনও বিধ্বস্ত।'