না লাগল বাবার শুক্রাণু, না মায়ের ডিম্বানু, গর্ভের বাইরেই জন্ম নিল কৃত্রিম ভ্রূণ

না লাগল বাবার শুক্রাণু, না মায়ের ডিম্বানু, গর্ভের বাইরেই জন্ম নিল কৃত্রিম ভ্রূণ

ভ্রুণের জন্মের জন্য পুরুষের শুক্রাণু এবং মহিলার ডিম্বানু আবশ্যিক। এতদিন পর্যন্ত এটাই ছিল সত্যি। এমনকি, টেস্ট টিউব বেবির ক্ষেত্রেও, ভ্রুণের জন্ম টেস্ট টিউবে হলেও শুক্রাণু এবং ডিম্বানুর নিষেক ঘটাতে হয়। পরে সেই ভ্রূণ কোনও মহিলারে গর্ভে স্থাপন করা হয়। কিন্তু, এতদিনের এই সত্যিটা পাল্টে দিলেন কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা।

সম্প্রতি শুক্রাণু এবং ডিম্বানু ছাড়াই এবং গর্ভের বাইরে তাঁরা একটি সিন্থেটিক ভ্রূণ বা কৃত্রিম ভ্রূণের বিকাশ ঘটিয়েছেন। তবে, তা মানব ভ্রূণ নয়, একটি ইঁদুরের ভ্রূণ। ইঁদুরের স্টেম সেল ব্যবহার করে তাঁরা এই ভ্রূণটির বিকাশ ঘটিয়েছেন। স্বাভাবিক গর্ভাবস্থার মতোই, সাড়ে আটদিন পর সেই ভ্রূণে সফলভাবে একটি মস্তিষ্ক, হৃদপিণ্ড এবং অন্যান্য অঙ্গগুলি বিকাশ ঘটেছে।

সম্প্রতি ‘নেচার জার্নালে’ এই গবেষণাটি প্রকাশিত হয়েছে। কৃত্রিম ভ্রূণটির বিকাশের সঙ্গে জড়িত কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীদের আশা, এর ফলে কোনও জীবিত প্রাণী ব্যবহার না করেই প্রাণের একেবারে প্রাথমিক অবস্থা নিয়ে গবেষণা চালাতে পারবেন। অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায় অনেক তাড়াতাড়ি মহিলাদের গর্ভপাত হয়ে যায়। কিছু কিছু ভ্রূণের পূর্ণ বিকাশ ঘটে না, কিন্তু বাকি ভ্রূণগুলি সুস্থ গর্ভাবস্থায় বিকাশ লাভ করে। কেন এটা ঘটে, এখনও বিজ্ঞানীদের কাছে এখনও তার কোনও সদুত্ত নেই। এই কৃত্রিম ভ্রূণের বিকাশের ফলে এখন গর্ভাবস্থায় ভ্রুণের মস্তিষ্ক অধ্যয়ন করতে পারবেন তাঁরা। শুধু তাই নয়, এই গবেষণার ফলাফল ক্রমে প্রতিস্থাপনযোগ্য কৃত্রিম মানব অঙ্গগুলির বিকাশের দিকেও মানব সভ্যতাকে এগিয়ে নিয়ে যাবে বলে আশা করা হচ্ছে।

তবে, খুব সহজে এই কৃত্রিম ভ্রূণ তৈরি করা যায়নি। কেমব্রিজের বিজ্ঞানীদের দলটি জানিয়েছে, এক দশকেরও বেশি গবেষণা চালাতে হয়েছে তাঁদের। প্রথমে সরল প্রাণীর ভ্রুণ, তারপর ক্রমান্বয়ে আরও জটিল ভ্রূণ তৈরি করা হয়েছে। গবেষণা দলটির প্রধান অধ্যাপক ম্যাগডালেনা জেরনিকা-গোয়েটজ জানিয়েছেন, তাঁদের কাজটি “জটিল অথচ সুন্দর”। তিনি বলেছেন: “এটি শুধুমাত্র মস্তিষ্কের বিকাশই ঘটায় না, বরং স্পন্দিত হৃত্‍পিণ্ড-সহ শরীর গঠনের জন্য সমস্ত উপাদানই তৈরি করে। আমরা যে এতদূর আসতে পেরেছি এটাই অবিশ্বাস্য। এটা বিজ্ঞানী সম্প্রদায়ের দীর্ঘ কয়েক বছরের স্বপ্ন ছিল। এক দশক ধরে আমাদের প্রধানত এই কাজের উপরই মনোযোগ দিয়েছিলাম। অবশেষে আমরা এটা করতে পেরেছি।”