কালো নয়, গোলাপি কোট পরে আদালতে, বক্ষ বিভাজিকা দেখা গেলেও ক্ষতি কী! বলছেন এই আইনজীবী

কালো নয়, গোলাপি কোট পরে আদালতে, বক্ষ বিভাজিকা দেখা গেলেও ক্ষতি কী! বলছেন এই আইনজীবী

ইনজীবীর পোশাক মানেই যে সাদা-কালো রঙের হতে হবে, এমন চিরাচরিত ধারণা ভেঙে চুরমার করে দিয়েছেন তিনি। কর্মস্থলে পোশাক নিয়ে পুরুষের কর্তৃত্বেও ঘোর আপত্তি রয়েছে তাঁর। পোশাক কোনও কর্মীর দক্ষতার মাপকাঠি হতে পারে, তা-ও মনে করেন না ক্যাথলিন মার্টিনেজ।

না! সাদা-কালো, হালকা ঘিয়ে বা নীল রঙের পোশাক নয়।

আইনজীবীর চিরাচরিত পোশাক ছেড়ে ক্যাথলিনের অঙ্গে উঠেছে গাঢ় গোলাপি রঙের কোট। তার সঙ্গে মানানসই রঙের টপ। এবং অবশ্যই হাঁটুর উপরে ওঠানো বাহারি গোলাপি স্কার্ট। এ পোশাকেই মক্কেলদের হয়ে আদালতে সওয়াল করেন ক্যাথলিন।

আইনজীবীরা কেন গা-ঢাকা পোশাকেই আদালতে যাবেন? প্রশ্ন তুলেছেন ক্যাথলিন। এর উত্তর পাওয়া গিয়েছে তাঁর পোশাকে। তাতে বক্ষ বিভাজিকা দেখা গেলেও 'কুছ পরোয়া নেই' মনোভাব আমেরিকার টেক্সাসের এই আইনজীবীর। পোশাক নয়, আইনি পরামর্শদাতা হিসাবে তাঁর যোগ্যতাই এ পেশার একমাত্র মাপকাঠি হওয়া উচিত বলে মনে করেন ক্যাথলিন।

পোশাক নিয়ে ক্যাথলিনের ধ্যানধারণায় মজেছেন নেটমাধ্যমের বহু অনুরাগী। টিকটকের মতো নেটমাধ্যমে তাঁর ভক্তসংখ্যা পৌঁছেছে পাঁচ লক্ষের কাছাকাছি। যদিও গোড়ায় অন্য সব আইনজীবীর মতো তিনিও চিরাচরিত সাদা-কালো পোশাকে আদালতে যেতেন। তবে তাতেই এক দিন গোল বাধল।

ক্যাথলিন পারিবারিক সমস্যা এবং অভিবাসন বিষয়ক আইনজীবী। কেরিয়ারের গোড়ায় তিনি যে আইনি সংস্থায় কাজ করতেন, ঘটনাচক্রে সেখানে তাঁর ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সকলেই ছিলেন পুরুষ। তাঁদের কাছে ক্যাথলিনের দাবি ছিল, তিনি গোলাপি পোশাকে আদালতে সওয়াল করতে চান। তবে তাঁরা ক্যাথলিনকে সাফ জানিয়েছিলেন, আদালতে গোলাপি পোশাক পরা যথাযথ নয়।

পোশাক নিয়ে 'পুরুষালি কর্তৃত্বে' সেই প্রথম আঘাত হানেন ক্যাথলিন। তাঁর ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের পরামর্শ ছিল, গোলাপি পোশাকে আদালতে গেলে আইনজীবী হিসাবে বিশেষ গুরুত্ব পাবেন না। কিন্তু, ক্যাথলিনের পাল্টা সওয়াল ছিল, পোশাক কেন দক্ষতার মাপকাঠি হবে?

সেই আইনি সংস্থার কাজ ছেড়ে নিজের 'গোলাপি ব্রিগেড' গড়েছেন ক্যাথলিন। ২০২০ সালে 'মার্টিনেজ ইমিগ্রেশন' নামে ক্যাথলিনের ফার্মের পথচলা শুরু। টেক্সাসে সে ফার্মের সদর দফতর। বছর দু'য়েকের মধ্যেই যা ডানা মেলেছে আমেরিকার ৫০টি প্রদেশে।

ক্যাথলিনের মতো তাঁর ফার্মের ২৫ জন কর্মীর সকলেই মহিলা। তাঁরা সকলেই গাঢ় গোলাপি পোশাকে আদালতে সওয়াল-জবাব করেন। ক্যাথলিনের 'গোলাপি ব্রিগেডের' ভিডিয়োটি ৫০ লক্ষেরও বেশি বার দেখা হয়েছে নেটমাধ্যমে।

আমেরিকার 'টমাস জেফারসন স্কুল অফ ল' থেকে আইনের ডিগ্রি লাভ করেছিলেন ক্যাথলিন। সে সময় থেকে আইনি ফার্মে কাজ করা পর্যন্ত সাদা-কালো পোশাকেই আদালতে যেতেন তিনি। ভাইরাল ভিডিয়োটির সঙ্গে ক্যাথলিনের সে সময়কার বহু ছবি দেখা গিয়েছে।

ওই ভিডিয়োর সঙ্গে ক্যাথলিন লিখেছেন, 'পুরুষ আইনজীবীদের সঙ্গে কাজ করার সময় তাঁরা বলেছিলেন, প্রথাগত পোশাক পরতে, যাতে লোকে আমাকে সিরিয়াসলি নেয়।' ওই ভিডিয়োতে এর পরেই ফুটে উঠেছে ক্যাথলিনের 'গোলাপি বিদ্রোহের' ছবি। তাতে দেখা গিয়েছে, তিন জন সহকর্মীর সঙ্গে ক্যাথলিন। সকলের পরনেই গোলাপি স্যুট-জ্যাকেট। সঙ্গে ক্যাপশন, 'সুতরাং আমি নিজের গোলাপি ব্র্যান্ডের ফার্ম শুরু করি যা দিয়ে ওই পুরুষ আইনজীবীদের মক্কেলদের হয়ে কাজ করছি।'

নিজের ফার্মের কর্মীরা গোলাপি পোশাকের সঙ্গে হিলতোলা উঁচু জুতো পরতেও উত্‍সাহ দেন ক্যাথলিন। তাঁর সাফ কথা, ''(আইনজীবীদের জন্য) রক্ষণশীল পোশাকরীতি মেনে চলা উচিত, এটা স্বীকার করি না। আমি এক জন আইনজীবী, তার কারণ সেই দক্ষতা অর্জন করেছি। আমার পোশাক কখনই আমার দক্ষতার লাইসেন্স হতে পারে না।''

খোলামেলা পোশাকে আদালতে গেলে তা কর্মক্ষেত্রে বাধা হতে পারে না, তা-ও মনে করেন ক্যাথলিন। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যমে তিনি বলেন, ''খাটো স্কার্ট হোক বা বক্ষ বিভাজিকা উন্মুক্ত করা পোশাক, মহিলা আইনজীবীরা কী পরে আদালতে যান, সেটা বিচার্য হওয়া উচিত নয়। আমার ফার্মের কর্মীদের ডক্টরেট-সহ আইনের ডিগ্রি রয়েছে, কারণ আমরা স্মার্ট। আইনি পরামর্শ দেওয়ার ক্ষেত্রে আমার দক্ষতার মাপকাঠি কখনই পরনের পোশাক হতে পারে না।''

ক্যাথলিনের দাবি, তাঁদের পেশায় নারী-পুরুষের ভেদরেখাটা বেশ প্রকট। এ ক্ষেত্রে নিজের তিক্ত অভিজ্ঞতার কথা শুনিয়েছেন তিনি। ক্যাথলিন বলেন, ''এক বার আদালতের এক কর্মীর মন্তব্য ছিল, আমার চুলের ছাঁটটা আইনজীবীদের মতো নয়। তবে আমার মনে হয়, মহিলা আইনজীবীরা যেমন খুশি চুলের কায়দা করলে আপত্তি কোথায়!''

পোশাক বা বাহারি চুলের কেতার পাশাপাশি চড়া প্রসাধনীতে আদালতে গেলেও তাতে মহাভারত অশুদ্ধ হয় না, মত ক্যথলিনের। তাঁর কথায়, ''স্বাভাবিক হোক বা চড়া রূপটান, যাতে আত্মবিশ্বাস পাওয়া যায় কিংবা খুশি হন, সে ধরনের প্রসাধনীই চড়িয়ে ফেলুক মহিলারা।''

ক্যাথলিনের এই 'গোলাপি বিদ্রোহে' বেজায় খুশি বহু নেটব্যবহারকারী। এক জন লিখেছেন, 'মক্কেল হিসাবে আমি আপনাদের সকলকেই বেছে নিতে রাজি।' গোলাপি রঙের পোশাকের মাধ্যমে যে নারীশক্তির বহিঃপ্রকাশ ঘটছে, তেমনও মনে করেন আর এক জন।

নিজের ফার্ম শুরুর সময় গোলাপি রংকেই কেন বেছে নিলেন ক্যাথলিন? তিনি বলেন, ''ফার্ম শুরু করার সময় এ ভাবেই নিজেদের ব্র্যান্ড হিসাবে পেশ করেছি। আর গোলাপি রঙের মাধ্যমে কর্মক্ষেত্রে স্মার্ট, পেশাদার নারীদের সামনের বাধাকে ভাঙতে চেয়েছি। আমরা তো নারীত্বকেই উদ্‌যাপন করেছি এবং তা সাফল্যের পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি।''