উত্‍সবের ১৫ দিন খুলে যায় 'নরকের দরজা', খেতে আসে ক্ষুধার্ত ভূতেরা

উত্‍সবের ১৫ দিন খুলে যায় 'নরকের দরজা', খেতে আসে ক্ষুধার্ত ভূতেরা

উত্সবের ১৫টা দিন, খুলে যায় 'নরকের দরজা'। পাতাল থেকে মুক্তি পায় চার ধরনের ভূত। আর সেই ক্ষুধার্ত ভূতদের খাইয়ে দাইয়ে তুষ্ট করেন দজীবিত মানুষ। প্রত্যেক বছর শরত্‍কালে কম্বোডিয়ায় হয় এই 'পাচুম বেন' উত্‍সব। যেখানে স্থানীয় পরিবারগুলি তাদের পূর্বপুরুষদের সম্মান জানানোর পাশাপাশি যেকোনও ক্ষুধার্ত আত্মাকে খাইয়ে সন্তুষ্ট করার চেষ্টা করে।

এই উত্সব খেমের উত্সব নামেও পরিচিত। প্রতি বছর সেপ্টেম্বর থেকে অক্টোবরের মধ্যে খেমের চন্দ্র ক্যালেন্ডারের দশম মাসে ১৫ দিনের জন্য চলে এই ভূতুরে উত্‍সব।

স্থানীয় বিশ্বাস অনুযায়ী উত্‍সবের এই ১৫ দিন ধরে নরকের দরজা খুলে যায়। ক্ষুধার্ত ভূতের দল বেরিয়ে আসে জীবিতদের মধ্যে। ভূতরা তাদের আত্মীয়দের কাছ থেকে খাবার পাওয়ার আশায় কবরস্থান এবং মন্দিরে মন্দিরে ঘুরে বেড়ায়। চারটি নির্দিষ্ট ধরণের ভূত সাময়িকভাবে মুক্তি পায় বলে মনে করা হয়। এর মধ্যে একদল রয়েছে, যারা ‘ক্ষুধার্ত’। আরেকদন শুধু রক্ত ​​এবং পুঁজ ভক্ষণ করে। আর একদল ক্রমাগত আগুনে জ্বলতে থাকে। শুধুমাত্র ‘পাক্রাক্তিকতোপাক চিভি’ ধরনের ভূতরা সাধু-সন্ন্যাসীদের কাছ থেকে নৈবেদ্য গ্রহণ করতে পারে।

অতৃপ্ত আত্মাদের ভালভাবে খাওয়ালে পরিবারগুলি আশীর্বাদ প্রাপ্ত হয়। কিন্তু পাচুম বেনের শেষে কোনও ভূত যদি খালি পেটে নরকে ফিরে যায়, তবে তাঁর যন্ত্রণা তাঁর জীবিত আত্মীয়দের ভোগ করতে হয়, এটাই স্থানীয় বিশ্বাস। কারণ ভূতদের অভিশাপ লাগে জীবিতদের উপর। তাই, কম্বোডিয়ার এই অনন্য উত্‍সবে প্রতিটি পরিবার, তাদের সাত পুরুষ পর্যন্ত মৃতদের খাবার দিয়ে সন্তুষ্ট করার চেষ্টা করে।

এর জন্য তাদের ভোরবেলা সূর্য ওঠার আগেই ঘুম থেকে উঠে থালা-বাসন তৈরি করে রাখতে হয়। কারণ ভূতরা কোনওরকম আলো পছন্দ করে না। সূর্যের সামান্য আলোও যদি প্রকাশিত হয়, তবে মনে করা হয় নৈবেদ্য তৈরি করতে অনেক দেরি হয়ে গিয়েছে। ফেনম পেনের এক সন্ন্যাসী বলেছেন, “নরক জীবিত মানুষদের থেকে অনেক দূরের জায়গা। তাই সেখানে থাকা আত্মারা সূর্যের আলো দেখতে পারে না। তাদের পরার মতো কাপড় নেই, খাওয়ার জন্য খাবার নেই। নরকে থাকলে অনেক যন্ত্রনা ভোগ করতে হয়। কারোর মৃত আত্মীয় স্বর্গে আছে না নরকে আছে, তা জানার কোনও উপায় নেই। তাই কম্বোডিয়ানরা আশা করে, এই নৈবেদ্য দেওয়ার মাধ্যমে তারা মৃতদের যন্ত্রণাকে সহজ করে।”