বেপরোয়া জীবন যাপনই ছিল কাল অগ্নিদগ্ধ হয়ে মহুয়ার চলে যাওয়া আজও রেখে গেছে হাজারো প্রশ্ন

বেপরোয়া জীবন যাপনই ছিল কাল অগ্নিদগ্ধ হয়ে মহুয়ার চলে যাওয়া আজও রেখে গেছে হাজারো প্রশ্ন

সালটা ১৯৮৫, ১২ জুলাই। বিরামহীন বৃষ্টিময় একটা রাত। দক্ষিণ কলকাতার অভিজাত নার্সিং হোমের আট তলায় ৭২২ নম্বর ঘর। ঝলসানো শরীর অস্ফুট উচ্চারণে শুধু কয়েকটা শব্দ শোনা গিয়েছিল, ''আমার গোলা রইল। ওকে দেখিস।'' বলে গিয়েছিলেন টলিউডের প্রবাদ প্রতিম সুন্দরী অভিনেত্রী মহুয়া রায়চৌধুরী (Mahua Raychowdhury)।

এদিন গভীর রাতে বেহালার ফ্ল্যাটে এক ভয়াবহ 'দুর্ঘটনা'র সাক্ষী থেকেছিলেন অভিনেত্রী। শোনা যায়, ছেলের দুধ গরম করতে গিয়েই নাকি স্টোভ ফেটে অগ্নি দগ্ধ হন অভিনেত্রী। কিন্তু ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ যে স্টোভ উদ্ধার করেছে, তা ছিল অক্ষত ও কেরোসিনশূন্য। অথচ মহুয়ার শরীরে কেরোসিনের গন্ধ ছিল। আর ছিল শরীরে আঘাতের কালশিটে। তাঁর স্বামীর শরীরেও আঘাত ছিল সামান্য। আর সেখান থেকেই দানা বাঁধে অভিনেত্রীর মৃত্যু রহস্য। অনেকের মতে এটা আত্মহত্যা আবার কারোর কারোর মতে ষড়যন্ত্র করে খুন। কারণ সে রাতে নাকি স্বামী তিলকের সঙ্গে তীব্র বিবাদ হয়েছিল নেশাতুর মহুয়ার। যদিও মৃত্যুকালীন বয়ানে মহুয়া বলে গিয়েছেন অসাবধানতায় তাঁর গায়ে আগুন ধরে গিয়েছিল। তবে তাতেও রয়েছে মতান্তর। অনেকেই বলেন ছেলের কথা ভেবেই হয়তো কাউকে আড়াল করতে চেয়েছিলেন অভিনেত্রী। দেখতে দেখতে ৩৭ বছর পার। আজও অধরা অভিনেত্রীর সেই মৃত্যু রহস্য।

দুর্ঘনার দিন যেমন ছিল মুসলধারের বৃষ্টি। টানা ১০ দিন হাসপাতালে যমে মানুষে লড়াইয়ের শেষের দিনও ছিল বিরামহীন বৃষ্টি। ঘোর বর্ষামুখর রাতেই ভয়ঙ্কর ভাবে আগুনে পুড়ে এগারোটা দিন মৃত্যুর সঙ্গে দ্বন্দ্বযুদ্ধ শেষ করে অগুনতি মানুষকে চোখের জলে ভাসিয়ে বিদায় নিয়েছিল সে। চলেছে গিয়েছিলেন স্বামীপুত্রের ভরাট সংসার ফেলে, বাংলা চিত্রজগতের নির্দেশক প্রযোজকদের এক গভীর অনিশ্চয়তার মধ্যে রেখে।

আজ ২৪ সেপ্টেম্বর। আজ থেকে ৬৪ বছর আগে এই দিনেই দমদমের এক মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্মেছিলেন অভিনেত্রী। বাবা নীলাঞ্জন রায় চৌধুরী ছিলেন একজন নৃত্যশিল্পী। পরিবারে ছিল আর্থিক অনটন। সেই সূত্রেই ছোট থেকে সেভাবে পড়াশোনা করতে পারেন নি অভিনেত্রী। বাবার সাথেই বিভিন্ন নাচের অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করতেন।

১৯৭২ সালে পরিচালক তরুণ মজুমদারের শ্রীমাণ পৃথ্বিরাজ ছবির হাত ধরে অভিনয়ে আত্মপ্রকাশ।
তাঁর সময়ের জনপ্রিয় নায়ক যেমন দীপঙ্কর দে, সন্তু মুখার্জী, তাপস পাল, চিরঞ্জিত চক্রবর্তী, রঞ্জিত মল্লিক, সন্ত মুখোপাধ্যায় ইত্যাদি অভিনেতার সাথে তিনি জুটি বেঁধে বহু সফল ছবি উপহার দিয়েছেন। তাপস পালের সাথে তার জুটি সর্বাধিক জনপ্রিয় হয়। এছাড়া তিনি প্রসেনজিত্‍ চট্টোপাধায়ের সাথেও কিছু ছবিতে কাজ করেন। 'শ্রীমান পৃথ্বীরাজ', 'দাদার কীর্তি', 'আজ কাল পরশুর গল্প' এবং 'আদমি অউর অওরত'-এর মতো ছবিতে তিনি আজও অবিস্মরণীয়। তারকা হয়েও মহুয়া ছিলেন মাটির খুব কাছাকাছি। তাঁর ফিল্মোগ্রাফি অসম্পূর্ণ রয়ে যাবে 'বাঘ বন্দি খেলা', 'সেই চোখ', 'কবিতা', 'বেহুলা লখিন্দর', 'ঘটকালি', 'পাকা দেখা', 'প্রিয়তমা', 'সুবর্ণলতা', 'শেষ বিচার', 'সুবর্ণগোলক', 'সাহেব', 'কপালকুণ্ডলা', 'ফাদার', 'ইমনকল্যাণ', 'অমৃতকুম্ভের সন্ধানে', 'প্রায়শ্চিত্ত', 'লালগোলাপ', 'পারাবত প্রিয়া', 'শত্রু'-সহ আরও অসংখ্য দর্শকমন ছুঁয়ে যাওয়া ছবির কথা না বললে।