বাসে ডাকাত পিছনের আসনে পুলিশ ফিল্মি কায়দায় গ্রেফতার করে 'হিরো' দাবাং অফিসার

বাসে ডাকাত পিছনের আসনে পুলিশ ফিল্মি কায়দায় গ্রেফতার করে 'হিরো' দাবাং অফিসার

এখনও পাকা হয়নি চাকরি। কাজে যোগ দেওয়ার মাত্র চার মাসের মধ্যেই রীতিমতো 'নায়ক' বনে গিয়েছেন ভদ্রেশ্বর থানার প্রোভিশনাল সাব-ইনস্পেক্টর (PSI) আশানুল হক (Ashanul Haq)। রীতিমতো ফিল্মি কায়দায় ডাকাত ধরেছেন তিনি। ডাকাতির মাত্র তিনঘণ্টার মধ্যে উদ্ধার হয়েছে প্রায় ২৫ কিলোগ্রাম সোনা-রুপোর গয়না।

হুগলি (Hoogly) জেলার ভদ্রেশ্বর (Bhadrehwar) থানার সাব-ইনস্পেক্টর আশানুল আরামবাগ (Arambagh) এলাকা থেকে বৃহস্পতিবার একক ভাবে চার সশস্ত্র দুষ্কৃতিকে পাকড়াও করতে পেরেছেন।

বৃহস্পতিবার বিকেলে চন্দননগর কমিশনারেটের (Chandanagar Commissariat) ডানকুনি (Dankuni) এলাকায় একটি সোনার দোকানে ডাকাতির অভিযোগ ওঠে। জনা ছয়েক সশস্ত্র দুষ্কৃতীর একটি দল ওই দোকানে ঢুকে লুটপাট চালায়। অভিযোগ ২৫ কিলোগ্রাম ওজনেরও বেশি সোনার গয়না লুট করা হয়।

ঘটনার পরই আশেপাশের সমস্ত থানাকে সতর্ক করে দেওয়া হয়। এলাকার সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখে দুষ্কৃতীদের চিহ্নিত করার জন্য ভিডিও ফুটেজটি আশপাশের সমস্ত থানায় ছড়িয়ে দেওয়া হয়। ছবি ছিল ছিনতাই করা ব্যাগটিরও। পুলিশের একটি গ্রুপ চ্যাট থেকে আশানুলও ডাকাতির ভিডিও-টি পেয়েছিলেন। জানতে পেরেছিলেন দুষ্কৃতীদের সম্ভাব্য অবস্থানের কথাও।

সে সময় আশানুল শেওড়াফুলি (Sheoraphuli) স্টেশনে ছিলেন। সেখান থেকে ট্রেন ধরে যাচ্ছিলেন হুগলি জেলারই আরামবাগে। নাটকীয় ভাবে এই পথেই তিনি দেখা পেয়ে যান ডাকাতি হওয়া সোনার গয়না ভর্তি ব্যাগ এবং ব্যাগ বাহক দুষ্কৃতীদের। চিনে নিতে বেশি সময় লাগেনি সদ্য কাজে যোগ দেওয়া পুলিশ আধিকারিকে।

নাটকীয়তার এই তো সবে শুরু। বাকিটাও পুরোপুরি 'ফিল্মি'। একবার দেখার পর আর পিছু ছাড়েননি আশানুল। ওই দুষ্কৃতীদের অনুসরণ করতে শুরু করেন। আরামবাগে নেমে দুষ্কৃতীরা একটি বাসে ওঠে। তাদের পিছন পিছন একাই বাসে উঠে পড়েন আশানুলও। বসেন একেবারে দুষ্কৃতীদের পিছনের আসনে। চলন্ত বাসের অন্য যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে, তাঁদের সাহায্যে আশানুল একাই দুষ্কৃতী ধরে ফেলেন। বাস থামিয়ে চার অভিযুক্তকে নিয়ে যান স্থানীয় একটি ক্লাবে। সেখানেই তাদের ব্যাগ খুলে পাওয়া যায় ২৫ কিলোগ্রাম সোনার গয়না, যা কিছুক্ষণ আগেই ডাকাতি করে এনেছিল দুষ্কৃতীরা।

লুটপাটের মাত্র তিন ঘণ্টার মধ্যে ডাকাতদের গ্রেফতার করা হয়। উদ্ধার করা হয় সমস্ত খোয়া যাওয়া গয়না। তার পরেই আশানুলের প্রশংসায় পঞ্চমুখ গোটা জেলার পুলিশ। নিউজ 18-এর সঙ্গে কথা বলার সময়, চন্দনগরের পুলিশ কমিশনার অমিত পি জাভালগি (Amit P Javalgi) বলেছেন, 'হুগলি জেলা পুলিশের মধ্যে সমন্বয়ের কারণেই মাত্র চার ঘণ্টার মধ্যে ডানকুনির সোনার দোকান থেকে চুরি যাওয়া সম্পূর্ণ সোনা পুনরুদ্ধার করা গিয়েছে।

ডাকাতির সিসিটিভি ফুটেজ তাত্‍ক্ষণিক ভাবে ছড়িয়ে দেওয়া এবং কার্যকর নাকা চেকিংয়ের ফলেই দুষ্কৃতীদের গ্রেফতার করা সম্ভব হয়েছে। বাস থেকে অভিযুক্তদের গ্রেফতারের ক্ষেত্রে পিএসআই আশানুল হক অসীম সাহসিকতা ও মননশীলতার পরিচয় দিয়েছেন। পাশাপাশি সিঙ্গুর থানার গ্রামীণ পুলিশ রূপচাঁদ, সিভিক ভলান্টিয়ার প্রসেনজিত্‍ এবং গোঘাট থানার সুবাস প্রধান ভূমিকাও গুরুত্বপূর্ণ। হুগলি গ্রামীণ পুলিশ এবং বাঁকুড়া পুলিশের দল নিরাপদ অভিযান এবং সোনা পুনরুদ্ধারে সাহায্য করেছে।'