'মা চলে যাওয়ার পর থেকে বাংলায় কথা বলার অভ্যাসটা কোথাও যেন হারিয়ে যাচ্ছে'

'মা চলে যাওয়ার পর থেকে বাংলায় কথা বলার অভ্যাসটা কোথাও যেন হারিয়ে যাচ্ছে'

শানের কাছে কলকাতা কোথাও যেন নিজের শিকড়কে ছোঁয়া। কাজের প্রয়োজনে প্রায়ই শানকে কলকাতায় আসতে হয়। এ বারও পুজোর আগে এলেন এবং মন খুলে আড্ডা দিলেন নিউজ 18 বাংলার সঙ্গে।

এখন কলকাতায় এলে কোন বিষয়টা খুব বেশি করে অনুভব করেন?

ইদানীং যখনই কলকাতায় আসি সকলের সঙ্গে বাংলায় কথা বলতে গিয়ে একটা জিনিস অনুভব করি যে,আমার বাংলাটা কোথাও যেন নড়বড়ে হয়ে যাচ্ছে। ঠিক আগের মত স্বতঃস্ফূর্তভাবে বাংলায় কথা বলতে পারি না। তার প্রধান কারণ আমার মায়ের চলে যাওয়া। আট মাস আগে মা চলে গিয়েছেন তার পর থেকে বেশ বুঝতে পারি আমার বাংলা কথা বলার দক্ষতা ঠিক আগের মতো নেই। কারণ মা বেঁচে থাকতে মায়ের সঙ্গে নিয়মিত বাংলায় কথা বলতাম। এখন মুম্বইয়ে তাই নিয়মিত বাংলায় কথা বলার অভ্যেস চলে গিয়েছে। যেমন তোমায় সাক্ষাত্‍কার দিলে বাবার নামটা মনে পড়ে যায় ।তুমি ওঁর নেমসেক। ''

এ বার তো আপনার ৫০ বছর পূর্ণ হবে। এই হাফ সেঞ্চুরি কতটা স্পেশাল?

ভাবতে গেলে খুবই স্পেশাল। কারণ ৩০ সেপ্টেম্বর আমার জন্মদিন। আমার ৫০ বছর পূর্ণ হবে, সেইসঙ্গে দুর্গা পুজোরও শুরু। এবার দুর্গা পুজোটাও খুব স্পেশাল।কারণ, বাংলায় দুটি ছবিতে আমার গান রয়েছে যা ওই ৩০ তারিখে মুক্তি পাবে। তার মধ্যে একটি ছবিতে প্রসেনজিত্‍ চট্টোপাধ্যায় রয়েছেন যাঁর অভিনীত ছবিতে আমি একটি গান গেয়েছি। সেই সঙ্গে ৩০ সেপ্টেম্বর বুম্বাদারও জন্মদিন। এবার পুজোয় আমার নিজের একটি গান ও রিলিজ করেছে যা ইতিমধ্যেই দর্শকদের মন কেড়েছে আর এবার দুর্গা পুজোয় আমি 'শ্রীভূমি স্পোর্টিং' এর পুজোর থিম সং-ও গেয়েছি। সবমিলিয়ে আমার ৫০ বছরের জন্মদিন জমজমাট।

কথায় বলে ৪০ পেরলেই চালশে। কিন্তু আপনি তো ৫০-এও ১৮ র যুবক। তাই নয় কি?

হ্যাঁ, ঠিকই বলেছেন ( হাসতে হাসতে) । এখন 'নিউজ 18'-এ ইন্টারভিউ দিচ্ছি তাই নিজেকে ওই আঠারো বছরের যুবকের মতই ফিল করছি। আসলে আমি বরাবরই এরকম চঞ্চল, ছটফটে ও মজার মানুষ হিসেবেই বাঁচতে ভালবাসি। বয়স তো শুধু একটা সংখ্যা মাত্র। মনের বয়স তো বাড়ে না। তাই আমি যখন গান গাই তখনো সেই প্রথম দিনের শানের মতোই ফিল করি। মনে করি আমি এখনো সেই তরতাজা যুবক।

এবার পুজোয় দু'টি ছবিতে আপনি গান গেয়েছেন। সেগুলোর বিষয়ে একটু জানতে চাই।

হ্যাঁ ! কাকতালীয়ভাবে দুটি ছবি একদিনে পুজোতে মুক্তি পাচ্ছে। আমি 'মিশন এভারেস্ট'- এ একটি গান গেয়েছি। আমার সঙ্গে কেকা ওই গানটি গেয়েছেন। অসম্ভব একটি ইন্সপায়ারিং সং। কারণ 'মিশন এভারেস্ট' ছবিটাই কোথাও একটা লড়াইয়ের গল্প বলে। আর আমাদের গানটা ঠিক সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে কোথাও যেন বাড়তি উত্‍সাহ যোগায় লড়াইটা এগিয়ে নিয়ে যেতে। আর বুম্বাদা ও দেবের 'কাছের মানুষ' এ আমার একটা গান রয়েছে। শ্রদ্ধেয় অমিত কুমারের সঙ্গে আমি এই গানটি গেয়েছি। ৩০ সেপ্টেম্বর দুটি ছবি মুক্তি পাচ্ছে, তাই এবার পুজোর শুরুটাই হচ্ছে আমার গানের ডাবলডেকার দিয়ে।

আপনার নিজেরও তো সিঙ্গলস এসেছে এ বার পুজোয়?

ইয়েস ! পুজোয় আমার নতুন গান আসছে ''কদম তলায় কে' (Kadam Tolay Ke)'। যার মিউজিক ভিডিওতে আমার দেখা যাবে অভিনেত্রী তৃণা সাহাকে । আমার সঙ্গে গানটি গেয়েছেন জুন বন্দ্যোপাধ্যায়। (June Banerjee)। এই গানের সুরও আমি নিজে করেছি। এবার পুজোয় ঢাকের বাদ্যি ও ধনুচি নাচের সঙ্গে আমার এই গান জমিয়ে দেবে আশা করছি।

পুজোর গান তো হল, পুজোয় নতুন প্রেমও হয়। আপনিও কি পূজোয় নতুন নতুন প্রেমে পড়েন?

মজার প্রশ্ন। এটা সত্যি বাঙালির পুজো মানে নতুন জামা, নতুন নতুন ঠাকুর দেখা, নতুন খাবারের স্বাদ নেওয়া, গান তো আছেই সেই সঙ্গে প্রেমে পড়া। কিন্তু আমি এই ব্যাপারে একেবারেই আনলাকি। কারণ আমার বেড়ে ওঠা মুম্বইয়ে। ওখানে হাতে গোনা কয়েকটি দুর্গাপুজো হয়। তাই পুজোর প্রেমের এই বিষয়টি আমি ঠিক জানতাম না। তাই সেভাবে অনুভবও করিনি। পরে যখন জানতে পারলাম তখন দেখি পুজোর প্রেমের বয়স এবং পরিস্থিতি কোনওটাই নেই। তবে ছোট থেকে পূজোর গানের প্রেমে অনেক পড়েছি। পুজোয় নতুন নতুন গানের রেকর্ড বার হত, যেগুলোর প্রেমে পড়ে যেতাম।


এখন পুজোর সময় কলকাতায় এলে কোন জিনিসটা মিস করেন?

এই যে পুজোর আগে শারদ প্রাতে কলকাতায় এসেছি, আপনাকে বলে বোঝাতে পারব না কতগুলো জিনিস একসঙ্গে মিস করছি। বিশেষ করে আমার অনেক আত্মীয়, দূর সম্পর্কের ভাইবোনেরা, বন্ধুবান্ধব কলকাতায় থাকেন। ইচ্ছে থাকলেও তাদের সঙ্গে দেখা করতে পারছি না। কারণ কাজের জন্য অনেকগুলো কমিটমেন্ট নিয়ে খুব অল্প সময়ের জন্য এসেছি। আর আমার বেশিরভাগ প্রিয়জনেরাই কলকাতার আশপাশে অর্থাত্‍ শহরতলিতে থাকেন। তাই মন চাইলেও তাদের সঙ্গে গিয়ে দেখা করতে পারছি না। এটা বিগ মিস।

কলকাতা থেকে মুম্বইয়ে আপনার পরিবারের জন্য কী নিয়ে যেতে ভোলেন না?

নিয়ে যেতে তো অনেক কিছুই ইচ্ছে করে তবে সবটা সম্ভব হয় না। কিন্তু আমি এখানকার বিশেষ কিছু খাবার ও মিষ্টি নিয়ে যেতে ভুলি না যেগুলো আমি এবং আমার পরিবার মুম্বইয়ে পাই না। আর সব থেকে বড় জিনিস যেটা যত বার আসি, খুব বেশি বেশি করে নিয়ে যাই তা হল, এই বাংলার মানুষের ভালবাসা.... কলকাতায় এলে গঙ্গার বুকে নৌকো দেখলে আমার নিজের ওই গানটা আজও মনে পড়ে যায়...."আমার প্রথম দেখা বৃষ্টির জলে ভাসিয়েছি ভেলা খেলার ছলে সেই জল গেছে মিশে কোন নদীতে/ গেছে হারিয়ে কোন সাগরে...মাঝিরে... ও মাঝিরে দেখেছ কি তুমি তারে ?নৌকো আমার ছেলেবেলার কাগজের......।''