জ্বলছে প্রতিবাদের আগুন, তেহেরানে ইন্টারনেট নিয়ন্ত্রণ, নয়া চ্যালেঞ্জের মুখে ইরান

জ্বলছে প্রতিবাদের আগুন, তেহেরানে ইন্টারনেট নিয়ন্ত্রণ, নয়া চ্যালেঞ্জের মুখে ইরান

হিজাব বিরোধী প্রতিবাদে উত্তাল ইরান। সরকারি হিসাব অনুযায়ী এখনও পর্যন্ত পুলিশ-প্রতিবাদী সংঘর্ষে অন্তত ১৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে অন্তত সাত জন পুলিশ। কিন্তু একটি মানবাধিকার সংস্থার দাবি অনুযায়ী, পুলিশের এখন পর্যন্ত ৫০ জনের মৃত্যু হয়েছে। মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। এত মৃত্যুর পরও প্রতিবাদ থামার কোনও লক্ষণ নেই।

প্রায় প্রতিদিন নানা জায়গায় নতুন করে বিক্ষোভ হচ্ছে। প্রায় ৮০টি শহরে বিক্ষোভের আগুন ছড়িয়ে পড়েছে।
নীতি পুলিশের হেফাজতে থাকা এক ২২ বছর বয়সী কুর্দি তরুণী মাহশা আমিনির মৃত্যুকে কেন্দ্র করে বিক্ষোভ শুরু হয়। ইরানের নীতি পুলিশ হিজাব সম্পর্কিত নিয়ম ভঙ্গের অভিযোগে তাঁকে আটক করেছিল পুলিশ। হেফাজতে থাকাকালীন তাঁর মৃত্যু হয়। ওই তরুণীর পরিবারের অভিযোগ অতিরিক্ত মারের ফলে তাঁর মৃত্যু হয়েছে। পুলিশ যদিও এই অভিযোগকে অস্বীকার করেছে। তাদের দাবি, হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে তাঁর মৃত্যু হয়েছে।

ইন্টারনেটে নিয়ন্ত্রণ

বিক্ষোভ শুরু হতেই তার নানা ছবি, ভিডিয়ো দ্রুত সমাজমাধ্যম সাইটগুলিতে ছড়িয়ে পড়ছে। তা রুখতে ইতিমধ্যেই তেহেরানে ইন্টারনেট নিয়ন্ত্রণ শুরু করেছে ইরানি সরকার। এই সিদ্ধান্তের সমালোচনা করে আমেরিকা বলেছে, ইরানের মানুষ যাতে বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে না থাকে তার জন্য সবরকম সাহায্য করতে প্রস্তুত তারা। মার্কিন বিদেশ সচিব অন্তনি বিনকেনের এই বার্তা শোনার পর এলন মাস্ক বলেছেন, তার স্যাটেলাইট ইন্টারনেট পরিষেবা সংস্থা স্টারলিঙ্কের মাধ্যমে তিনি ইরানবাসীদের ইন্টারনেট পরিষেবা দিতে প্রস্তুত।

আগুন ধিকিধিক জ্বলছিল আগেই

আগুন আগে থেকেই ধিকদিক করে জ্বলছিল। মাহশা আমিনির মৃত্যু সেই আগুনকে উস্কে দিয়েছে। বিবিসি বলছে, রাজনীতিকদের দুর্নীতি, মুদ্রাস্ফীতির কারণে দারিদ্র বেড়ে যাওয়া, পারমাণবিক আলোচনায় অচলাবস্থা এবং সামাজিক ও রাজনৈতিক স্বাধীননতার অভাবে তরুণ প্রজন্মকে হতাশ করে তুলেছে। ইরানের সোশ্যাল সিকিউরিটি অর্গানাইজেশন রিসার্চ ইন্সটিটিউটের মতে দেশটির আড়াই কোটি মানুষ দারিদ্র সীমার নীচে বসবাস করে। শুধু তাই নয় এ সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে।

মৌলবাদীদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ।

নারীদের প্রতিবাদ

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইরানে এই ধরনের প্রতিবাদ বিক্ষোভ আগেও হয়েছে। তবে এবারের প্রতিবাদের বিশেষত্ব নারীদের প্রতিবাদ। নারীরা যে ভাবে পথে নেমে হিজাব খুলে, নিজেদের চুল কেটে পাতাকা বানিয়ে প্রতিবাদ জানাচ্ছেন তা নজির বিহীন।

ইসলামি বিল্পবের পর পরিবর্তন

নাগরিক অধিকার রক্ষা সংগঠনগুলি দীর্ঘদিন ধরে বলে আসছে, ইরানে নারীদে উপরে অত্যাচার বেড়েছে। তা ১৯৭৯ সালে ইসলামি বিপ্লবের পর থেকে।
বিপ্লবের পরই নারীদের হিজাব পরতে বাধ্য করা হয়। এ ছাড়া তাঁদের ঘোরাফেরা, কাজের অধিকারে নিয়ন্ত্রণ আনা হয়। কিন্তু এই সব পরিবর্তন পুরুষদের ক্ষেত্রে শোনা যায়নি।

পথে মহিলারা।

প্রতিবাদ আন্দোলনে অংশ নিচ্ছেন পুরুষরা

এ বারে বিক্ষোভ আন্দোলনে অংশ নিচ্ছেন পুরুষরাও। সমাজবিজ্ঞানী বলছেন, প্রগতীশীলতার দাবিকে মেনে আন্দোলনে সামিল হচ্ছেন তারা। আন্দোলনের স্লোগান হল নারী, জীবন, মুক্তি—মূলত ধর্মীয় মৌলবাদের বিরুদ্ধে।

এ বারের আন্দোলন বেশি অংশগ্রহণমূলক

২০০৯ সালে নির্বাচনে কারচুপির প্রতিবাদে আন্দোলনে অংশ নিয়েছিলেন মধ্যবিত্তরা। সেই আন্দোলন মূলত বড় শহরগুলিতেই সীমাবদ্ধ ছিল। এ বার আর বিস্তৃতি দেশের ৮০টি শহরে।
২০১৯ এবং ২০১৯ সালে আন্দোলন সীমাবদ্ধ ছিল দরিদ্রদের মধ্যে। বিশেষজ্ঞরা বলেনন, এ বারে আন্দোলনে অংশ নিচ্ছেন মধ্যবিত্ত এবং শ্রমজীবী উভয় শ্রেণির মানুষ।

খবরের সব আপডেট পড়ুন খবর অনলাইনে। লাইক করুন আমাদের ফেসবুক পেজ। সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল।