স্মৃতির পুজোর শাড়ি পরে মায়ের পায়ে অঞ্জলি দেবেন গাঁয়ের বধূ টুম্পা কিঁউকি সাস ভি কভি বহু থি

স্মৃতির পুজোর শাড়ি পরে মায়ের পায়ে অঞ্জলি দেবেন গাঁয়ের বধূ টুম্পা কিঁউকি সাস ভি কভি বহু থি

শাড়ি পরেন তিনি। শাড়িই পরেন। কলকাতায় এলেই শাড়ি কেনেন। তিন দিনের রাজ্য সফরে কলকাতায় এসেও শাড়ি কিনেছিলেন। পুজোর শাড়ি। তুঁতে-সাদায় মেশানো জমিতে কাঁথা স্টিচের কাজ করা বাটিক সিল্ক। কিন্তু বাংলা ছাড়ার আগে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী স্মৃতি ইরানি সেই শাড়ি দিয়ে গেলেন টুম্পাকে।

কে টুম্পা?

হুগলি জেলার প্রত্যন্ত এক গ্রামের বধূ টুম্পা পণ্ডিত নাগ। সন্তানসম্ভবা টুম্পা এখন বাপের বাড়িতে রয়েছেন। হুগলিরই জাঙ্গিপাড়া থানা এলাকার আটপুর পঞ্চায়েতের বিলারা গ্রামে। টুম্পার দাদা শুভেন্দু পণ্ডিত বিজেপিকর্মী। সম্প্রতি রাজনৈতিক সংঘর্ষে জখম হয়ে শয্যাশায়ী। তাঁকেই দেখতে গিয়েছিলেন স্মৃতি। জানা ছিল না, বাড়িতে শুভেন্দুর বোন টুম্পাও রয়েছেন। তাই নিজের জন্য কেনা পুজোর শাড়িটাই উপহার হিসাবে টুম্পাকে দিয়ে দেন তিনি। শাড়ি পেয়ে টুম্পা আপ্লুত।

গরিব বাড়ির মেয়ে টুম্পার কাছে পুজোর মরসুমে শাড়ির মাহাত্ম্য কতটা, তা বোঝেন 'কিঁউকি সাস ভি কভি বহু থি'র অভিনেত্রী স্মৃতি। তিনিও ঘরের বউ, আবার মা-ও। আর সেই উপলব্ধি থেকেই গাঁয়ের 'বহু' টুম্পাকে নিজের পছন্দের শাড়ি নির্দ্বিধায় দিয়ে দিয়েছেন।

হিন্দি ধারাবাহিক 'কিঁউকি সাস ভি কভি বহু থি' সম্প্রচারিত হয়েছিল ২০০০ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত। টানা ন'বছর ধরে চলা ধারাবাহিকে অভিনয় করে আসমুদ্রহিমাচলের কাছে ঘরের মেয়ে হয়ে উঠেছিলেন 'তুলসী' (স্মৃতির চরিত্রের নাম)। সে দিনের তুলসী এখন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী। শুধু মন্ত্রী নন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর আস্থাভাজনও বটে। মোদী যখন ক্ষমতায় এলেন, তখন রাজ্যসভার সাংসদ হিসাবেই মন্ত্রী হন। মানবসম্পদ থেকে বস্ত্র মন্ত্রক সামলেছেন। আর ২০১৯ সালে অমেঠি আসনে রাহুল গান্ধীকে হারিয়ে আসার পরে আরও গুরুত্ব বেড়েছে স্মৃতির। দ্বিতীয় মোদী মন্ত্রিসভায় প্রথমে শুধু নারী ও শিশুকল্যাণ মন্ত্রকে ছিলেন। গত জুলাই মাসের রদবদলে যুক্ত হয়েছে সংখ্যালঘু মন্ত্রকও।

মোদীর পাশাপাশি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এবং বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নড্ডারও কাছেও ভরসার স্মৃতি। তাই দেশের বিভিন্ন রাজ্যে সাংগঠনিক দায়িত্বও পালন করতে হয়। বাদ নেই বাংলাও। নির্বাচনের প্রচারে তো বটেই, এখন সংগঠন বিস্তারেও বাংলার বেশ কয়েকটি এলাকার দায়িত্বে স্মৃতি। তারই অঙ্গ হিসাবে তিন দিনের সফরে এসেছিলেন সোমবার। ফিরে গিয়েছেন বুধবার। সে দিনই গিয়েছিলেন শ্রীরামপুর লোকসভা এলাকার বিভিন্ন গ্রামে। তারই একটি বিলারা। স্মৃতির সঙ্গী হয়ে বিলারায় গিয়েছিলেন রাজ্য বিজেপির নেতা প্রণয় রায়। তাঁর কথায়, ''কর্মসূচি অনুযায়ী শুভেন্দুর বাড়িতে গিয়েছিলেন মন্ত্রী। সেখানে কথাবার্তার শেষে বাড়ির লোকদের সঙ্গেও পরিচয় করেন। তখনই টুম্পার সঙ্গে আলাপ হয়। তার পরেই নিজের সহকারীকে নির্দেশ দেন, গাড়িতে থাকা নতুন শাড়িটি নিয়ে আসার জন্য। সেটি কোথায় রাখা আছে তা-ও বলে দেন। সেটিই উপহার দিয়ে দেন টুম্পাকে।''

বোন মন্ত্রীর কাছ থেকে পুজোর মুখে এমন উপহার পাওয়ায় দাদা শুভেন্দু বেজায় খুশি। তবে তাঁরও কিছু প্রাপ্তি হয়েছে। অসুস্থ শুভেন্দু শুক্রবার বলেন, ''দিদি আমার চিকিত্‍সার সব খরচ চালাবেন বলে কথা দিয়েছেন। দল দিচ্ছিলই, তিনিও দেবেন বলেছেন। সেই সঙ্গে আমাদের ভাঙাচোরা বাড়িটাও নিজের খরচে সারিয়ে দেবেন বলে কথা দিয়ে গিয়েছেন।''

স্মৃতির এমন আচরণে বিস্মিত বিজেপির শ্রীরামপুর সাংগঠনিক জেলার সম্পাদক অরিন্দম ঘোষ। পেশায় শিক্ষক অরিন্দম বলেন, ''অত ভাল শাড়ি এক জন গ্রামের মেয়ে পাওয়ার কথা ভাবতেই পারে না! কিন্তু মন্ত্রী যে ভাবে নিজের শাড়িটা দিয়ে দিলেন, সেটা দেখে গ্রামের সকলেই অবাক! এটা যে তিনি মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকেই করেছেন, তা-ও বুঝতে পেরেছে সকলে।''

আনন্দবাজার অনলাইনের পক্ষে স্মৃতির সঙ্গে যোগাযোগ করতে একাধিক বার তাঁকে ফোন করা হয়েছিল। তবে তাঁর সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি। অরিন্দম জানান, শুধু ওই গ্রামেই নয়, কাছের নস্করপাড়াতেও গিয়েছিলেন স্মৃতি। সেখানেও তাঁর সঙ্গে বিভিন্ন পরিবারের মহিলাদের সঙ্গে পরিচয় হয়। মোট ১৪ জন ছিলেন। কিন্তু স্মৃতির কাছে আর নতুন শাড়ি না-থাকায় সকলকে উপহার দেওয়ার কথা জানান জেলা নেতৃত্বকে। সেই নির্দেশ ইতিমধ্যেই পালন করেছেন অরিন্দমরা। বিজেপি সূত্রে খবর, স্মৃতি নিজেই ওই খরচ বহন করতে চান বলে জানিয়েছেন।

কেন? কিঁউ কি সাস ভি কভি বহু থি। কারণ, বাস্তব জীবনে এখনও শাশুড়ি না-হলেও তিনিও কখনও 'বধূ' ছিলেন। তিনি বোঝেন গাঁয়ের বধূদের জীবন।