মা এই খাবার খেলে গর্ভে খিলখিলিয়ে হেসে ওঠে শিশু আবার এটা খেলে কান্না মুখ করে আবাক গবেষকরা

মা এই খাবার খেলে গর্ভে খিলখিলিয়ে হেসে ওঠে শিশু আবার এটা খেলে কান্না মুখ করে আবাক গবেষকরা

গাজর খেতে খুব ভাল লাগে? বাঁধাকপি একদম পছন্দ নয়? ভাববেন এই অভ্যাস ছোট থেকে তৈরি হয়েছে। হতেই পারে মায়ের গর্ভে থাকার সময় থেকেই আপনার গাজরের প্রতি ভালবাসা তৈরি হয়েছিল, আর বাঁধাকপির স্বাদ পেলেই রাগ হত! জন্মের পরে যখন ধীরে ধীরে সবরকম খাবার খাওয়ার অভ্যাস তৈরি হল তখন সেইসব পরিচিত স্বাদ পেয়ে আবার আগেরমতো রুচি তৈরি হল।

এইসব আজগুবি মনে হচ্ছে তো? কিন্তু গবেষণায় এমনই অবাক করা ব্যাপার জানতে পেরেছেন বিজ্ঞানীরা।

গর্ভের মধ্য়েও কি শিশুর অনুভূতি তৈরি হয়? হাসি-কান্না-রাগ-অভিমান ঠিক কতটা বুঝতে পারে গর্ভস্থ ভ্রূণ, এই নিয়েই গবেষণা শুরু করেছিলেন ইংল্যান্ডের একদল বিজ্ঞানী। ১০০ জন অন্তঃসত্ত্বা মহিলাকে নিয়ে এই গবেষণা চালান তাঁরা। আলট্রাসোনোগ্রাফি ও আর কিছু পদ্ধতিতে গর্ভস্থ ভ্রূণের প্রতি মুহূর্তের অবস্থা পরীক্ষা করতে গিয়েই তাক লেগে যায় গবেষকরা। আশ্চর্যরকম তথ্য় পান তাঁরা।

বিজ্ঞানীরা দেখেন, গর্ভে থাকার সময়েই মা যে খাবার খাচ্ছেন তার স্বাদ ও গন্ধ পায় ভ্রূণ। এমনকি সেইসব খাবারের প্রতি আলাদা রুচিও তৈরি হয়ে যায়। ভ্রূণ খাবারের স্বাদ পায় কিনা জানতে বিজ্ঞানীরা হবু মায়েদের নানা রকম সব্জি ও ফলের পাউডার ভার্সন খাওয়ান। ক্যাপসুলে করে খাওয়ানো হয় মায়েদের। স্বাভাবিকভাবেই মা যে খাবার খাচ্ছেন তার মিশ্রণ রক্তের মাধ্যমে নাড়ি হয়ে অ্যামনিয়োটিক তরলে মিশে যাচ্ছে। সেই তরল খাচ্ছে ভ্রূণও। এরপর তার সেইসব খাবার ভাল লাগছে কিনা সেটা বোঝার চেষ্টা করেন বিজ্ঞানীরা।

৪ডি আলট্রাসাউন্ডে ধরা পড়ে, গাজরের মিশ্রণ দেওয়া ক্যাপসুল খাওয়ার পরে বেশিরভাগ ভ্রূণই নাকি হাসিহাসি মুখ করেছিল। আবার যেসব মায়েরা বাঁধাকপির স্বাদ দেওয়া ক্যাপসুল কেয়েছিল, তাঁদের গর্ভস্থ ভ্রূণেরা নাকি কাঁদো কাঁদো মুখ করেছিল। মানে এই স্বাদ তাদের একেবারেই ভাল লাগেনি।

বিজ্ঞানীরা বলছেন, এই পরীক্ষা করে প্রাথমিকভাবে বোঝা গেছে, গর্ভস্থ ভ্রূণেরও বেশ পছন্দ-অপছন্দ আছে। খাবারে রুচি তৈরি হয় ভ্রূণ অবস্থা থেকেই। দেখা গেছে, মায়েরা যেসব খাবার খাচ্ছেন ভ্রূণও সেইসবই পছন্দ করছে। ভবিষ্যতে তার সেইসব খাবারেই আলাদা রুচি তৈরি হবে। আবার মায়েরা যেসব খাবার এড়িয়ে যাচ্ছেন, গর্ভস্থ সন্তানেরও সেইসব খাবারে বিতৃষ্ণা তৈরি হবে পরবর্তী সময়ে।

মায়ের খাদ্যাভ্যাস শিশুর পরবর্তী জীবনের পছন্দের খাবার নির্ধারণ করে। মা যে খাবার খান তার মলিকিউলগুলোতে অভ্যস্ত হয়ে পড়ে শিশু। মা যে খাবারগুলো এড়িয়ে যান, পরবর্তীতে শিশুরাও ওগুলো খেতে চায় না। গর্ভের ভেতরে ও বাইরে থেকে আওয়াজ পায় শিশু। ১৬ সপ্তাহের মাথায় তার শ্রবণেন্দ্রিয় গঠন হতে থাকে। সে মায়ের হৃত্‍স্পন্দন, খাবার, নিঃশ্বাস, হাঁটা, কথা বলা ইত্যাদি আওয়াজ পায়। বিজ্ঞানীরা বলছেন, মা যদি হাসিখুশি থাকেন, পুষ্টিকর খাবার খাওয়ার অভ্যাস করেন তাহলে সে অভ্যাস তৈরি হবে শিশুরও।