ভারতে "ডেস্টিনেসন ওয়েডিং"; আর্জি প্রধানমন্ত্রীর, 'ওয়েড ইন ইন্ডিয়া' - এর পক্ষে আম্বানিরা

ভারতে "ডেস্টিনেসন ওয়েডিং"; আর্জি প্রধানমন্ত্রীর, 'ওয়েড ইন ইন্ডিয়া' - এর পক্ষে আম্বানিরা

গোটা বিশ্বের প্রায় ২৫ শতাংশ বিয়েই অনুষ্ঠিত হয় ভারতে। সহজ-সরল ভাবে বলতে গেলে এই পরিসংখ্যানটা হল, সারা বিশ্বে ঘটা ৪টির মধ্যে ১টি বিয়ে হয় ভারতে। ইন্ডিয়ান ব্র্যান্ড ইক্যুইটি ফোরাম (আইবিইএফ) হল এমন একটি ট্রাস্ট, যা প্রতিষ্ঠা করেছে মিনিস্ট্রি অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি। আইবিইএফ-এর পরিসংখ্যান বলছে, এনার্জি, ব্যাঙ্কিং এবং বিমা মার্কেটের পরে চতুর্থ বৃহত্তম ইন্ডাস্ট্রি হল ভারতীয় বিয়ের ইন্ডাস্ট্রি। ২০২৩ সালে বার্ষিক রাজস্বের পরিমাণ ছিল ৪.৭৪ ট্রিলিয়ন টাকা।

 

খুচরো ব্যবসায়ী এবং ব্যবসায়ীদের জন্য দেশের নেতৃত্বস্থানীয় বাণিজ্য প্রতিষ্ঠান কনফেডারেশন অফ অল ইন্ডিয়া ট্রেডার্স (সিএআইটি) ভবিষ্যদ্বাণী করে জানিয়েছে যে, সারা দেশে চলতি বিয়ের মরশুমে প্রায় ৪২ লক্ষ বিয়ে হতে চলেছে। আর ব্যবসার দিক থেকে দেখতে গেলে বিবাহ সংক্রান্ত বিক্রয় এবং পরিষেবার পরিমাণ হবে ৫.৫ লক্ষ টাকারও বেশি।

 

তবে ডেস্টিনেশন ওয়েডিংয়ের ক্ষেত্রে উর্ধ্বগতি দেখা যাচ্ছে। ২০২২ সালে এর পরিমাণটা ছিল ১৮ শতাংশ, অথচ ২০২৪ সালে সেই পরিমাণটা দেখা যাচ্ছে ২১ শতাংশ। রিসার্চ অ্যান্ড মার্কেটস ২০২৩ ডেস্টিনেশন ওয়েডিং গ্লোবাল মার্কেট রিপোর্ট থেকে জানা যাচ্ছে যে, ডেস্টিনেশন ওয়েডিং ইন্ডাস্ট্রি ২০২২ সালে ২১ বিলিয়ন ডলার ছিল, যা ২০২৩ সালে বৃদ্ধি পেয়ে ঠেকেছে ২৮ বিলিয়ন ডলারে।

 

সিএআইটি পরিসংখ্যান থেকে জানা যাচ্ছে যে, প্রতি বছর পাঁচ হাজারেরও বেশি দম্পতি আজকাল বিয়ে করার জন্য বিদেশে পাড়ি দিচ্ছেন। আর বিদেশে ডেস্টিনেশন ওয়েডিংয়ের জন্য প্রতি বছর ৭৫০০০ কোটি থেকে ১ লক্ষ কোটি টাকা খরচ করে ভারতীয়রা। আর যেহেতু বিদেশে টাকা খরচ হচ্ছে, তার জন্য কর এবং শুল্ক থেকে রাজস্ব হারাচ্ছে সরকারি রাজকোষ।

 

নিজের মাসিক রেডিও প্রোগ্রাম ‘মন কি বাত’-এ ‘ওয়েড ইন ইন্ডিয়া’ প্রচার করার সময় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেন যে, বেশ কিছু বড় পরিবার বিয়ের অনুষ্ঠানের আয়োজন করছে বিদেশে। এমন অবস্থা দেখে বেশ হতবাকই হয়েছিলেন তিনি। এরপরে ওই অনুষ্ঠানেই তিনি দেশের মানুষের কাছে বিয়ের অনুষ্ঠান ভারতের মাটিতেই করার আর্জি জানান। এতে দেশের অর্থ বাইরে চলে যাবে না।

 

প্রধানমন্ত্রীর কথায়, “আমরা যদি ভারতবাসীর মাঝে দেশের মাটিতেই বিয়ের অনুষ্ঠানগুলি উদযাপন করি, তাহলে দেশের অর্থ দেশেই থেকে যাবে।” ২০২৩ সালের ডিসেম্বর মাসে দেহরাদুনের একটি সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী মোদি আরও একবার ভারতীয়দের কাছে ‘ওয়েড ইন ইন্ডিয়া’-র জন্য আর্জি জানান।

 

এই মুহূর্তে দেশের অন্যতম বড় অনুষ্ঠান হয়ে উঠেছে অনন্ত আম্বানি এবং রাধিকা মার্চেন্টের প্রাক-বিবাহ উৎসব। সংবাদমাধ্যমের কাছে জামনগরে অনুষ্ঠিত ওই প্রাক-বিবাহ উৎসবে রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের ডিরেক্টর অনন্ত আম্বানি বলেন যে, তিনি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ওয়েড ইন ইন্ডিয়া দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়েছেন। তাঁর কথায়, যখন প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন যে, ভারতেই বিয়ে করা উচিত, তখন সেই বিষয়টা গর্বের এবং আনন্দের।

 

শুধু তা-ই নয়, প্রধানমন্ত্রীর এই ডাকে সাড়া দিয়েছেন তারকা দম্পতি রকুল প্রীত সিং এবং জ্যাকি ভাগনানি। গত মাসেই গোয়ায় গাঁটছড়া বেঁধেছেন এই দম্পতি। যদিও শোনা যায়, প্রথমে বিদেশেই ডেস্টিনেশন ওয়েডিংয়ের ইচ্ছা ছিল ওই দম্পতির। কিন্তু একেবারে শেষ মুহূর্তে সিদ্ধান্ত বদলান এবং ভারতের মাটিতেই বসে তাঁদের বহু প্রতীক্ষিত বিয়ের আসর।